‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে ভারতের সরকারি ব্রিফিংয়ের পর হঠাৎ করেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই নারী কর্মকর্তার উপস্থিতি শুধু ব্রিফিং নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
ভারতীয় সময় বুধবার (০৭ মে) সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া ও সার্চ ইঞ্জিনে সবচেয়ে বেশি খোঁজ হওয়া নামগুলোর একটি ছিল এই কর্নেল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেই ব্রিফিংয়ে তাঁর সঙ্গী ছিলেন উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। তাঁরা তুলে ধরেন কীভাবে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ভেতরে সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালিয়েছে।
সোফিয়া কুরেশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘সিগন্যাল কোর’-এর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। সামরিক যোগাযোগ ও ইলেকট্রনিকস বিষয়ে দক্ষ এই নারী কর্মকর্তার নাম যুক্ত রয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অভিযানের সঙ্গে।
২০১৬ সালে তিনি আন্তর্জাতিক মহড়ায় ইতিহাস গড়েন। ১৮টি দেশের সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণে আয়োজিত ‘এক্সারসাইজ ফোর্স ১৮’-এ ভারতীয় ৪০ সদস্যের দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। সেই সময় তাঁর পদবী ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল। এই মহড়ায় অংশ নেয় চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশ। নারী নেতৃত্বে ভারত ছিল একমাত্র দেশ।
শুধু যুদ্ধ বা মহড়ায় নয়, শান্তিরক্ষা অভিযানে সোফিয়ার দক্ষতা প্রশংসনীয়। ২০০৬ সালে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কঙ্গোতে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করেন তিনি।
সোফিয়ার পারিবারিক ইতিহাসেও সেনাবাহিনী ঘনিষ্ঠ। তাঁর বাবা ও দাদা দুজনই ছিলেন সেনাসদস্য। স্বামীও ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রি অফিসার।
গুজরাটের বাসিন্দা সোফিয়া বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এরপর যোগ দেন অফিসার্স ট্রেনিং একাডেমিতে এবং ১৯৯৯ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন।
ব্রিফিংয়ে সোফিয়ার পাশে দাঁড়ানো আরেক নারী কর্মকর্তা উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংয়ের নামও উঠে এসেছে আলোচনায়। তাঁর নামের মধ্যেই রয়েছে পরিচয়—‘ব্যোম’ অর্থ মহাশূন্য, আর ‘ব্যোমিকা’ মানেই আকাশকন্যা। ব্যোমিকা ২০১৭ সালে ভারতীয় বিমানবাহিনীতে উইং কমান্ডার পদে উন্নীত হন। হেলিকপ্টার পাইলট হিসেবে আড়াই হাজার ঘণ্টারও বেশি সময় উড়েছেন তিনি, বিশেষ করে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়।
২০২১ সালে ২১ হাজার ৬৫০ ফুট উচ্চতার মাউন্ট মনিরং অভিযানে অংশ নেন প্রতিরক্ষা বাহিনীর নারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে, সেখানেও ব্যোমিকা ছিলেন একজন মুখ্য সদস্য।
এই দুই নারী কর্মকর্তার সাহস ও নেতৃত্ব ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নতুন বার্তা দিয়েছে। সেনাবাহিনীতে নারীর অবস্থান যে শুধু আনুষ্ঠানিক নয়, বাস্তবিক নেতৃত্বেও তাঁরা কতটা গুরুত্বপূর্ণ—তা আরেকবার প্রমাণ হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে।