শেরপুর টাউন ক্লাব পাবলিক লাইব্রেরি মহিলা অনার্স কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষায় স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (৩ মে) দুপুরে পরীক্ষার শুরু হওয়ার আগমুহূর্তে। এতে করে পরীক্ষার স্বচ্ছতা, তথ্য অধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বমহলে।
দুপুর ২টা থেকে পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও তার আগেই সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে যান স্থানীয় সাংবাদিকরা। কিন্তু তারা কলেজের প্রধান ফটকটি ভেতর থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। একাধিকবার নক করার পরেও গেট খুলে দেওয়া হয়নি। পরে জানা যায়, সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
পরীক্ষার তদারকিতে দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (শিক্ষানবিশ) ফয়সাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, “পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি পাবলিক পরীক্ষাতেও এটি মানা হয়। পরীক্ষা শেষে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া যাবে।”
তবে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল—এটি কোনো পাবলিক পরীক্ষা নয়, একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নিয়োগ পরীক্ষা। সেখানে গোপনীয়তা এতটা জরুরি কেন?
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক খান বলেন, “সাধারণত আমরা সাংবাদিকদের পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনের সুযোগ দিয়ে থাকি। এখানে যদি তাদের ঢুকতে না দেওয়া হয়ে থাকে, তবে সেটি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত হতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা যেতে পারে।”
শেরপুর উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি দীপক সরকার বলেন, “এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। গণমাধ্যম কর্মীদের তথ্য সংগ্রহে বাধা দিয়ে স্বচ্ছতার জায়গায় কালো পর্দা টানা হয়েছে। এটি কোনো সামরিক গোপন অভিযান নয়, যে সাংবাদিক প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও তখন আর কার্যত পরীক্ষার মূল প্রক্রিয়া দেখার সুযোগ ছিল না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের কেউ কেউ বলেন, “পরীক্ষার আগে থেকেই কিছু গুঞ্জন চলছিল। আজ গেট বন্ধ করে রাখার পর আমাদের সন্দেহ আরও বেড়েছে। স্বচ্ছতা থাকলে এমন নিষেধাজ্ঞা থাকার কথা না।”
এই বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে একটি নিয়োগ পরীক্ষায় গণমাধ্যম কর্মীদের প্রবেশাধিকার সীমিত করার এই ঘটনাকে স্থানীয় সাংবাদিকরা গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের সামিল বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতে সাংবাদিকদের উপস্থিতি বাধা নয়, বরং সহায়ক শক্তি—এটি যে প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ ভুলে গেছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং গণতন্ত্রবিরোধী।