কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার কুলিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল রাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে গলায় জুতার মালা দেয়ার একটি ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্রনিন্দার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য।
স্থানীয়রা জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা কানু’র সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মুজিবুল হকের বিরোধের জেরে তার বিরুদ্ধে এর আগে একাধিক মামলা হয়েছিল। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে তাকে একা পেয়ে স্থানীয় ১০ থেকে ১২ জন তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করে।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, স্থানীয় জামায়াত ইসলামীর সমর্থক প্রবাসী আবুল হাসেমের নেতৃত্বে অহিদ মো: রাসেল, মো: পলাশসহ ১০ থেকে ১২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুর গলায় জুতার মালা দিয়ে এলাকায় এমনকি কুমিল্লায়ও থাকতে পারবেন না বলে হুমকি দিচ্ছেন। ওই সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা কানু গলায় থেকে জুতার মালা সরিয়ে এলাকায় আর আসবেন না বলেও জানান। এ সময় তার ভিডিও ধারণ ও ছবি নেওয়া হয়। হেনস্তাকারী বলতে থাকেন এক গ্রাম লোকের সামনে মাফ চাইতে পারবেন কিনা? অন্যরা বলতে থাকেন কুমিল্লা আউট, এলাকা আউট, ছেড়ে দাও।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু গণামাধ্যমে বলেন, গতকাল এলাকায় হঠাৎ আমাকে একা পেয়ে স্থানীয় বেশ কয়েক জোর করে আমার গলায় জুতার মালা পরিয়ে ভিডিও করেন। এর বিচার আমি কার কাছে চাইব? মামলা দিয়ে আর কী হবে? তারা সবাই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি আওয়ামী লীগ করলেও বিগত দিনে তাদের কোনও ক্ষতি করিনি। উল্টো আওয়ামী লীগের তৎকালীন এক এমপির রোষানলে পড়ে ৮ বছর এলাকা ছাড়া ছিলাম আমি।
চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেয়া অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আক্তারুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর পরই মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু মোবাইল ফোনে বিষয়টি আমাকে অবগত করেছেন।
এ বিষয়ে তিনি কোনও অভিযোগ করবেন না বলেও জানান আমাকে। তবে গত রাতেই ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভাইরাল হওয়ার আবারও তাকে থানায় অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মো: মাহফুজুর রহমান বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় জামায়াতের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। প্রবাসী আবুল হাসেম আমাদের দলের কেউ না। তবে তিনি আমাদের দলের সমর্থক কিংবা অনুসারী হলেও হতে পারে। এ ঘটনায় আমাদের দলের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।