দুর্নীতি মামলায় ১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত এবং একাধিক হত্যা ও মাদক মামলার পলাতক আসামি বগুড়ার যুবলীগ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর আবদুল মতিন সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
শনিবার (২১ জুন) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর বছিলা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বগুড়া জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার।
তিনি জানান, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থাণে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর মতিন সরকার পলাতক ছিলেন এবং পরিবারসহ ঢাকায় অবস্থান করছিলেন তিনি।
মতিন সরকার বগুড়া শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি চকসূত্রাপুর এলাকার মৃত মজিবর রহমান সরকারের ছেলে।
২০০০ সালে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের পর ২০০৭ সালে তাঁর ২৭ বছরের কারাদণ্ড হলেও কিছুদিন পরই বেরিয়ে আসেন। এরপর রাজনীতির ছায়ায় হয়ে ওঠেন বগুড়া শহরের এক প্রভাবশালী ‘কসাই মতিন’।
২০১১ সালে বাণিজ্য মেলায় শফিক চৌধুরী, ২০১৩ সালে যুবদল নেতা ইমরান হত্যাকাণ্ডসহ অন্তত চারটি হত্যা মামলার আসামি তিনি। একইসঙ্গে মাদক, অস্ত্র, জমি দখল ও চাঁদাবাজিসহ আরও ডজনখানেক মামলায় তাঁর নাম রয়েছে।
২০০৮ সালের পর রাজনীতিতে তাঁর উত্থান ঘটে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা মঞ্জুরুল আলম মোহনের ‘দেহরক্ষী’ হিসেবে রাজনীতির মঞ্চে প্রবেশ করেন তিনি। পরে নানা অপরাধের মাধ্যমে বগুড়া শহরে আধিপত্য বিস্তার করেন। এক পর্যায়ে যুবলীগের পদ ছাড়াও জেলা ট্রাক মালিক সমিতি ও চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোও দখলে নেন।
চলতি বছরের ১১ মার্চ বগুড়ার বিশেষ জজ আদালত দুর্নীতির মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অপরাধে ২ কোটি ২৮ লাখ ৩১ হাজার ৩১৫ টাকা জরিমানা ও রাষ্ট্রীয় অনুকূলে জব্দের নির্দেশও দেওয়া হয়।
২০১৭ সালে কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার কথা বলে এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তাঁর ছোট ভাই তুফান সরকারের বিরুদ্ধে। পরে নির্যাতনের শিকার হন ছাত্রী ও তার মা। তাঁদের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। এই ঘটনার নেপথ্যেও মতিন সরকারের প্রভাব ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। তুফান সরকার বর্তমানে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে আছেন।
সর্বশেষ বগুড়া পৌরসভার নির্বাচনে মতিন সরকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তবে তখনও তাঁর বিরুদ্ধে চলছিল একাধিক মামলা।