দায় আসলে কার? বেশ কয়েকবছর ধরেই অব্যাহত রয়েছে বগুড়ার শেরপুরে বাঙ্গালী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। এ নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালিত হলেও থেমে নেই বালু উত্তোলনের কাজ। ফলে বর্ষাকালে ভাঙ্গনের মুখে পড়ছে আবাদী জমি ও বসতবাড়ি।
সাধারনত লক্ষ্য করা যায় বালু উত্তোলনকারীরা ভ্রাম্যমান আদালতে দন্ডিত হয়ে কিছুদিন বন্ধ রেখে পুনরায় চুপিসারে কার্যক্রম শুরু করে। তখন দিনের পরিবর্তে রাতের আধাঁরে বালু বিক্রি করা হয়। একই ভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ বাঙ্গালী নদী থেকে বালু উত্তোলন চলছিল উপজেলার খানপুর ইউনিয়েনের বড়ইতলী এলকায়। সেখানে সর্বশেষ গেল ১৪ই ফেব্রুয়ারী স্থানীয় প্রশাসনের অভিযানের পর কিছুদিন বন্ধ রাখা হয় বালু উত্তোলন।
এর পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন কাজ শুরু হয়। সাইনবোর্ডে লেখা অনুযায়ী বাঙ্গালী-করতোয়া-ফুলজোর-হুরাসাগর নদী সিস্টেম ড্রেজিং/পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণ” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নদী খনন করা হচ্ছে। যা বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেট।
এলাকার বেশ কিছু মানুষ জানান মোন্নাফ চৌধুরী, শাহিদুল ইসলাম, বক্কার আলী ও চার্লী সরকারসহ স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এই কাজের সাথে যুক্ত। গেল ফেব্রুয়ারী মাসের ১ তারিখে প্রতিকার চেয়ে তারা গণস্বাক্ষরসহ বগুড়া জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে একদিকে তাদের আবাদী জমি নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারি ট্রাক চলাচলের কারণে দিনরাত শব্দ ও বায়ুদূষণের পাশাপাশি গ্রামের রাস্তাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনীর সাইনবোর্ড লাগানোয় এখন তারা প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।
সরেজমিনে দেখা হয় বালু উত্তোলনকারীদের একজন মোন্নাফ চৌধুরীর সাথে। তিনি জানান, উপজেলার খানপুর ইউনিয়েনের বড়ইতলী এলাকার বাঙ্গালী নদীর তীরে চলমান এই প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম কোয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। তাদের কাছ থেকে সাব কন্ট্রাক্ট নিয়েছে সিরাজগঞ্জের এনআর এন্টারপ্রাইজ নামক আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই তারা স্থানীয়ভাবে কার্যাদেশ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে নদী থেকে বালু তুলছেন। সেখানে দেখা যায়, লক্ষ লক্ষ ঘনফুট বালু স্তুপ করে রাখা হয়েছে। এস্কেভেটর দিয়ে সেগুলো ট্রাকে ভরে গ্রামীন সড়ক নষ্ট করে বিক্রির জন্য নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়।
উপজেলা দপ্তর সুত্রে জানা যায়, বালু উত্তোলনকারীরা সেনাবাহিনীর লোকজনসহ অনুমোদনের কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন। সেখানে সরকারি নকশা অনুযায়ি নদী খনন করা হচ্ছে কিনা সে বিষয়টি তারা তদারকি করবেন। তবে বগুড়ার পানি উন্নয় বোর্ড ও দায়িত্ব প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা বলেছেন বিষয়টি অবৈধ। কিন্তু বৈধতার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। কেউ কারও দায় নিতে চাচ্ছেন না। আর এরই ফাঁকে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে শতশত ট্রাক বালু। তাহলে দায় কার?
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড :
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, গত ১৯ মার্চ জেলা প্রশাসকের সম্বয় সভায় শেরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বড়ই তলী এলকায় বাঙ্গালী নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি উপস্থাপন করেছিলেন। তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীর অনুমোদন থাক বা না থাক সেখানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
কারণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ি সুয়িং ড্রেজার ও এস্কেভটর দিয়ে নির্দিষ্ট নকশা অনুযায়ী নদী খনন করতে হবে। নদী থেকে উত্তোলনকৃত বালু একটি জায়গায় স্তুপ করে রেখে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে বুঝিয়ে দিতে হবে। এরপর সেগুলোর অর্ধেক পাবে জমির মালিক। বাকি বালু নিলামে বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। যেহেতু সেখানে বাংলা ড্রেজিং ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে সেটা অবশ্যই অবৈধ।
এ বিষয়ে প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বরত সেনা কর্মকর্তা সার্জেন্ট রাব্বি জানান, শেরপুরের বড়ইতলী এলাকায় নদী খননের নামে বালু উত্তোলনে তাদের অনুমোদন নেই। সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাইনবোর্ডের অপব্যবহার করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোয়েস্ট ইন্টারন্যাশনালের দেওয়া সাব-কন্ট্রাক্টের ওয়ার্ক অর্ডার বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি সেখান থেকে সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এসএম রেজাউল করিম বলেন, অবৈধ মাটি ও বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা সেনাবাহিনীর তরফ থেকে এখনও কোনো চিঠি পাইনি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।