বগুড়ার শেরপুরে রাতের অন্ধকারে মন্দিরে হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধা ৭টার দিকে মির্জাপুর ইউনিয়নের বেলতা গ্রামে মাছিপুকুর কালিমাতা মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রাতেই শেরপুর থানার ওসি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রায় দুইশতাধিক বছরের পুরোনো মাছিপুকুর কালিমাতা মন্দিরে নিয়মিত পূজা অর্চনা হয়ে আসছে। এই মাছিপুকুর এখন মাল পুকুর নামে পরিচিত। সিএস খতিয়ান অনুযায়ী এই মাল পুকুরের ২ দশমিক ২২ একর জমি রানী ভবানী এস্টেটের সম্পত্তি। এই পুকুর পাড়ের পশ্চিমে ১০ শতাংশ জমির উপরে কালিমাতা মন্দির। তৎকালীন সিএস খতিয়ানে এই সম্পত্তি জনসাধারণের ব্যবহার্য্য সম্পত্তি হিসেবে উল্লেখ রয়েছে।
কিন্তু স্থানীয় বেলতা গ্রামের প্রভাবশালী নির্মল চন্দ্র সরকার ও পরিমল চন্দ্র সরকার এগুলো নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি দাবি করেন। পুকুরটি তারা দীর্ঘদিন যাবৎ ভোগদখল করে আসছেন এবং বিভিন্ন সময়ে পুকুর পাড়ের মন্দিরটিকে উচ্ছেদের চেষ্টা করেন। এর ধারাবাহিকতায় রবিবার সন্ধ্যায় মন্দিরে ভাংচুর করা হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।
স্থানীয় ৭৫ বছর বয়সী তারাপদ সরকার বলেন, বাপ-দাদাদের আমল থেকে শুনে আসছি এই মাছিপুকুরে জাগ্রত কালিমাতার থান রয়েছে। এখন এখানে নিয়মিত পূজা অর্চনা হয়।
মন্দির কমিটির সভাপতি ও পূজারী শ্রী সঞ্জয় সরকার জানান রবিবার সন্ধ্যা রাতে নির্মল ও পরিমলের নেতৃত্বে ১০/১২ জন মন্দির উচ্ছেদে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এসময় তারা মন্দিরের পূজা অর্চনার জন্য ফুলের বাগান, ভোগঘর, মহাদেবের আসন ভাঙচুর করে ও উপড়ে ফেলে। মন্দিরের আগত দর্শনার্থীদের কালিমাতা মন্দির উন্নয়নের দান বাক্স , মন্দিরের সামনে আটচালার ছয় বান্ডিল ঢেউটিন, টিউবওয়েলের মাথা ও পূজার থালা-বাসন তারা লুট করে নিয়ে গেছে। এতে মন্দিরের প্রায় ৫০ হাজার টাকার মালামাল লুটপাট করা হয়েছে।
সঞ্জয় সরকারের বাবা অভীনাশ চন্দ্র সরকার জানান, গত ৯ আগস্ট রাত ৯ টার দিকে এই মন্দির সংক্রান্ত ঘটনায় আমার ছেলেকে মারধর করে। তখন শেরপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছিলাম, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। আবারো তারা মন্দির উচ্ছেদের চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে নির্মল চন্দ্র সরকারের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে পরিমল চন্দ্র সরকার বলেন, পুকুর ও পুকুরের পাড় তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। কিন্তু তাদেরকে না জানিয়ে মন্দিরের উন্নয়ন করা হয়েছে।
এজন্য রবিবার সন্ধ্যার পর শুধু মন্দিরটি রেখে বাকি সবকিছু উচ্ছেদ করা হয়েছে। তিনি টিউবওয়েলের মাথা খুলে নেওয়া, ভোগঘর ভাংগা ফুলের গাছ কাটা ও মহাদেবের আসন ভাঙচুর করার কথা স্বীকার করে বলেন, মন্দিরে পূজা অর্চনা করতে হলে তারা নিজেরাই করবেন। অন্য কাউকে করতে দিবেননা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ শেরপুর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সংগ্রাম কুন্ডু বলেন, “সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। যে কারণেই করে থাকুক, এই ঘটনা দুঃখজনক। আমরা উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা করে সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করব।”
এ বিষয়ে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবু কুমার সাহা জানান, মন্দির ভাংচুরের ঘটনায় ততক্ষণাত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। “মন্দিরের যে সকল ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে সেগুলো ঠিক করে দিতে বলেছি”।