শেরপুরে বিএনপি সদস্য আব্দুল মতিন হত্যার ২৫ দিন পার হলেও খুনি ও খুনের কারণ শনাক্ত করতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। গত ২৩ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের মান্দাইল গ্রামে অস্ত্রের আঘাতে খুন হন আব্দুল মতিন (৬০)।
২২ নভেম্বর (বুধবার) তিনি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আর বাড়িতে ফেরেননি। পরের দিন সকালে ঝিনাগাড়ি পুকুর পাড় থেকে ২০০ গজ দূরে একটি সরিষাক্ষেতে অজ্ঞান হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় ওই রাতেই মতিনের মেয়ে মৌসুমী আক্তার (৩৫) বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শেরপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। তবে এই ঘটনার ২৫ দিনেও হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি থানা পুলিশ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
মান্দাইলের ঝিনাগাড়ি পুকুরপাড়ে আব্দুল মতিন কেন গিয়েছিলেন? সেখানে কি তাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো? কে বা কারা তাকে কি কারনে হত্যা করলো?
মামলার বাদি আব্দুল মতিনের মেয়ে মৌসুমী আক্তার জানান, আমার বাবাকে নৃশংস ভাবে হত্যার রহস্য এখনও উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। উপরন্তু তারা আমার ভাইকে সন্দেহ করছে। তাকে মাদকাসক্ত প্রমাণের চেষ্টা করছে।
আব্দুল মতিনের ছেলে মিলন রহমান (৩০) জানান, পুলিশ আমাকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। প্রতিবারই আমি মাদকের টাকার জন্য আমার বাবাকে হত্যা করেছি এমন ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করছে।
আব্দুল মতিনের ভাগ্নে মিল্টন (৩৫) বলেন, আমার মামার বিরুদ্ধে পুলিশ মিথ্যা নাশকতার মামলা দিয়েছে, গ্রেফতার আতংকে মামা বাড়িতে থাকতেন না। এই সুযোগেই অজ্ঞাত খুনিরা তাকে হত্যা করেছে।
এ দিকে এই হত্যাকান্ড নিয়ে স্থানীয় বিএনপি কর্মীদের হয়রানী করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। আবার বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, আতংক ছড়াতে সরকার দলীয় বা কোনো বাহিনীর লোকজনই মতিনকে হত্যা করেছে।
স্থানীয় বিএনপির সমর্থক সাইফুল ইসলাম জানান, গত ১৫ নভেম্বরের সংঘর্ষের ঘটনায় ৬৭ জনের পাশাপাশি অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে। তাই আমার বিরুদ্ধে মামলা না থাকলেও গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে থাকি। এখন আমাকেও হত্যার ঘটনায় সন্দেহ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আতংকে আছি।
শেরপুরে বিএনপি সদস্য মতিন হত্যার বিষয়ে শেরপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মিন্টু বলেন, গত ১৫ নভেম্বর আমাদের মিছিলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও পুলিশ যৌথভাবে হামলা করেছে। উল্টো পুলিশের মিথ্যা মামলায় আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আমিসহ অনেকই আত্মগোপনে আছেন। সারা দেশেই আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের উপর সরকার দলীয় ও বাহিনীর লোকজন গুপ্ত হামলা করছে, অনেককে হত্যা করেছে। আব্দুল মতিনও একইভাবে খুন হয়েছেন। তাই পুলিশ এখন পর্যন্ত খুনিদের সনাক্ত করতে পারছে না।
এ ঘটনায় শেরপুর থানার ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম রেজা জানান, পুলিশের বিরুদ্ধে তোলা এসব অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি বলেন, অতি দ্রুত সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।