ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান ও হামাসের পাল্টা রকেট হামলার উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে আকস্মিক সফরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
সফরে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।
টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, রোববার (৬ এপ্রিল) স্থানীয় সময় রাতে স্ত্রী সারাহ নেতানিয়াহুকে সঙ্গে নিয়ে হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট থেকে ওয়াশিংটনে পৌঁছান ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী।
সফরের সময়সূচি ঘোষণা করার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে নেতানিয়াহুর এই যাত্রা শুরু হয়, যা ইসরাইলি কূটনীতিতে একপ্রকার ‘তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সফরে নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের মধ্যে মূল আলোচনা হবে গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি, হামাস কর্তৃক জিম্মিদের মুক্তি, এবং সাম্প্রতিক মার্কিন শুল্ক নীতির বিষয়ে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র সরকার সম্প্রতি ইসরাইলি পণ্যের ওপর ১৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
হোয়াইট হাউস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় ওভাল অফিসে নেতানিয়াহুর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈঠক নির্ধারিত রয়েছে। এ ছাড়া তিনি মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা এই নীতিনির্ধারকই ট্রাম্পের নতুন শুল্ক কাঠামোর দেখভাল করছেন।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ জানিয়েছে, নেতানিয়াহুকে বহনকারী ‘উইং অব জায়ন’ রাষ্ট্রীয় বিমানটি ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে যাত্রাপথে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘপথ ঘুরে এসেছে।
এর পেছনে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) কর্তৃক নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জারি এই পরোয়ানা কার্যকর হতে পারে এমন কয়েকটি দেশের আকাশসীমা—যেমন আয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস—এড়িয়ে চলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি।
“বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু দেশের আকাশসীমা ব্যবহার করা হয়নি,” বলেছেন ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
এই কারণে বিমানটি ক্রোয়েশিয়া, ইতালি এবং ফ্রান্সের আকাশসীমা পেরিয়ে ওয়াশিংটনে পৌঁছায়।
নেতানিয়াহুর এই সফর প্রাথমিকভাবে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত নির্ধারিত থাকলেও, ইসরাইলি চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, সফরের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃসংজ্ঞায়নের এই মুহূর্তে নেতানিয়াহুর এই সফর কৌশলগত গুরুত্ব বহন করছে।
সফরের পেছনে গত সপ্তাহে নেতানিয়াহু, ট্রাম্প ও হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পরবর্তী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।