মেয়ের জন্য চিপস কিনে বাড়ি ফিরেছিলেন মোবারক হোসেন। গত ১৯ জুলাই রাজধানীর রায়েরবাগে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন তিনি।
নিহত মোবারক হোসেন (৩৩) কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব নয়াকান্দি এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম মো: আবুল হাশেম। মোবারক তার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর রায়েরবাগের আপন বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার সঙ্গে থাকতেন মা, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী।
গত (১৯ জুলাই) তাদের বাসার নিচে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। দুপুরে বাসার নিচে দোকানে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। দুই দিন পর গ্রামের বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়।
গত মঙ্গলবার সরজমিনে করিমগঞ্জের পূর্ব নয়াকান্দি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মোবারকের বাড়িতে সুনসান নীরবতা। তার ঘরে ঢুকতেই দেখা যায় হাঁড়িপাতিল, রান্নার চুলাসহ সংসারের জিনিসপত্র ও আসবাব স্তূপ করে রাখা।
মোবারক নিহত হওয়ার পর ঢাকা থেকে পরিবারের সদস্যরা এগুলো নিয়ে তাদের নিজ বাড়িতে চলে এসেছেন। নিহত মোবারকের মেয়ে আদিবা চিপস নিয়ে দৌড়াদৌড়ি ও খেলাধুলা করছে। আড়াই বছরের আদিবা এখনও বুঝতেই পারছে না তার জন্য চিপস কিনতে গিয়ে তার বাবার সঙ্গে কী ঘটেছে।
মোবারকের ছোট ভাই মোশারফ হোসেন বলেন, গত (১৯ জুলাই) ছিল শুক্রবার। বাড়ির নিচে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। আমার ভাই (মোবারক) বাসার পাশের একটি মসজিদ থেকে জুমার নামাজ আদায় করে ঘরে ফিরেছিল মোবারক।
তখন আদিবা বাবার কাছে চিপস খাওয়ার জন্য বায়না ধরে। পরে মোবারক বাসার নিচের দোকান থেকে তার মেয়ের জন্য চিপস আনতে যায়। এসময় তার মাথার এক পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। পরে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেল কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্বামীকে হারিয়ে শোকে পাথর স্ত্রী শান্তা আক্তার। একপর্যায়ে তিনি তার ছোট্ট মেয়ে আদিবাকে কোলে টেনে নিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, কী অপরাধ ছিল আমার স্বামীর? কেন তাকে এভাবে গুলিতে মরতে হলো? এই ছোট্ট শিশুকে নিয়ে আমি কোথায় দাঁড়াব? কী করব? কিছুই বুঝতে পারছি না।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আবদুল হান্নান বলেন, ‘মোবারক কোনো রাজনীতি, আন্দোলন বা ঝামেলার সঙ্গে জড়িত ছিল না। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি তাকে। তিনি খুবই নিরীহ আর অমায়িক ছেলে ছিল। তার এই অকালমৃত্যুতে শোকাহত এলাকাবাসী। এখন সরকারের উচিত মোবারকের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং তার স্ত্রী-সন্তানকে সহায়তা করা।