আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন নিয়ে একটি গোপন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
তিনি অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র চলছে এবং ছাত্র নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “এই পোস্ট দেওয়ার পর আমার কী হবে জানি না। কিন্তু সত্য প্রকাশ করতেই হবে।”
হাসনাত আবদুল্লাহ তার পোস্টে দাবি করেন, “কিছুদিন আগে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র চলছে। এটি পুরোপুরি ভারতের পরিকল্পিত। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন ও তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, ১১ মার্চ দুপুর ২:৩০টায় হাসনাত আবদুল্লাহসহ আরও দুইজন ক্যান্টনমেন্টে এই পরিকল্পনার প্রস্তাব পেয়েছেন। তাঁদেরকে বলা হয়েছে, আসন সমঝোতার বিনিময়ে এই প্রস্তাব মেনে নিতে হবে। আরও দাবি করা হয়েছে, একাধিক রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছে।
পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, “আমাদের বলা হয়, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে মাসে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নতুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেবে।”
কিন্তু তিনি ও তার সহযোগীরা এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। তার ভাষায়, “আমরা বলেছি, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করুন।”
ক্যান্টনমেন্টের প্রতিক্রিয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের জানানো হয়, আওয়ামী লীগকে ফেরাতে কোনো বাধা দিলে সংকটের দায় আমাদের নিতে হবে। তাদের স্পষ্ট কথা ছিল—’আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক’।”
তিনি আরও জানান, আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “যে দল এখনো অপরাধ স্বীকার করেনি, ক্ষমা চায়নি, তাদের ক্ষমা করা সম্ভব নয়।” উত্তরে রাগান্বিত হয়ে বলা হয়, “তোমরা কিছুই জানো না, তোমাদের অভিজ্ঞতা নেই। আমরা ৪০ বছর ধরে এই সার্ভিসে আছি। আওয়ামী লীগ ছাড়া ‘ইনক্লুসিভ’ নির্বাচন হবে না।”
তখন তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না। আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের লাশের উপর দিয়েই ফিরিয়ে আনতে হবে।” এরপর আলোচনা অসমাপ্ত রেখেই তারা সভাস্থল ত্যাগ করেন।
জুলাই আন্দোলনের সময়ও বিভিন্ন পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে তারা জনগণের ওপর আস্থা রেখেছিলেন এবং সফল হয়েছিলেন। তিনি লেখেন, “আজও আমি আপনাদের উপরেই ভরসা রাখতে চাই। এ পোস্ট দেওয়ার পর হয়তো নানা চাপের মুখে পড়তে হবে, কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে আপসের কোনো সুযোগ নেই।”
তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আসুন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হই। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারলে জুলাই আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার আর কোনো সুযোগ নেই, বরং তাদের নিষিদ্ধ হতেই হবে।”