বগুড়ার শেরপুরের শাহ বন্দেগী ইউনিয়ন পরষিদের চেয়ারম্যানের (ইউপি) বিরুদ্ধে উঠা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে কাজ শুরু করেছে তদন্ত কমিটি। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও মেলেনি প্রতিবেদন। এরমধ্যেই গত অর্থ বছরের কাজ শুরু করে অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা।
ইউপি সদস্যদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ভূমি হস্তান্তর বাবদ ১ শতাংশ রাজস্ব পেয়ে থাকে ইউনিয়ন পরিষদ। এই খাতে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৮ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩২ লক্ষ ৭৯ হাজার ৮০০ টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৯ লক্ষ ৮ হাজার টাকা আয় করেছে ইউনিয়ন পরিষদ।
এছাড়াও ওই ৩ অর্থবছরে বসতবাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স ও ব্যবসা-বাণিজ্য ট্যাক্সসহ প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা আয় হয়েছে। কিন্তু এসব টাকা জনকল্যাণে ব্যয় না করে চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ ও সচিব ইকবাল হোসেন দুলাল আত্মসাৎ করেছেন। উপরন্তু গত ১৬ মাস ধরে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের সম্মানী ভাতা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এবিষয়ে গত ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ জন সদস্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) কর্মকর্তা আব্দুল মজিদের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম ও উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা রেজাউল করিম। কিন্তু তদন্ত চলাকালীন সময়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আত্মসাৎ করা প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু করেছেন বলে দাবি করেছেন অভিযোগকারীরা।
তদন্ত কমিটির যোগসাজশে অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। এতে সুষ্ঠু বিচার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন তারা।
অভিযোগকারী ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন,“ইউনিয়ন পরিষদের আধাপাকা ভবন নির্মানের জন্য গত ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপজেলা পরিষদ থেকে ৪ লক্ষ ২৮ হাজার ৮০০ টাকাও উত্তোলন করলেও কোন কাজ করেননি। তদন্ত শুরু হওয়ার পরে জানুয়ারী মাসের শুরুতে কাজ শুরু করা হয়েছে।”
অন্যতম অভিযোগকারি শাহবন্দেগী ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, “তদন্ত শুরু হওয়ার পরে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। এভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি অপরাধ আড়াল করার সুযোগ পায়, আমরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবো।”
এবিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা। কিছু ইউপি সদস্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান আবদুল মজিদ জানান, “তদন্ত কার্যক্রম চলছে। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়টিও প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিক খান বলেন, “তদন্ত টিমকে দ্রুততম সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”