ঢাকার কেরানীগঞ্জে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর এক কিশোরীকে হত্যার দায়ে তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে লাশ গুমের ঘটনায় প্রত্যেককে সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সকালে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মুন্সী মোহাম্মদ মশিয়ার রহমান এই রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, কেরানীগঞ্জের মো. সজিব (২৫), ফরিদপুরের মো. রাকিব (২৩) ও শরীয়তপুরের শাওন ওরফে ভ্যালকা শাওন (২৬)।
এছাড়া লাশ গুমের ঘটনায় প্রত্যেককে ৭ বছর করে কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর এরশাদ আলম (জর্জ) জানান, আদালত দণ্ডপ্রাপ্তদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে অর্থদণ্ড আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এই মামলার অপর দুই আসামি আলী আকবর (২২) ও মো. রিয়াজ (২২) খালাস পেয়েছেন।
২০২২ সালের ১১ জুন কেরানীগঞ্জ মডেল থানার আঁটিবাজার এলাকায় পুলিশের টহল চলাকালে ৯৯৯ নম্বরে এক নারীর মরদেহ ভেসে থাকার সংবাদ আসে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে এবং পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করে।
ভিকটিমের বান্ধবী বৃষ্টি আক্তার আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে জানান, নিহত কিশোরী তার বান্ধবী মারিয়া। পরে পুলিশ অভিযুক্ত শাওনকে গ্রেপ্তার করলে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেখানে তিনি জানান, রাকিব, সজিব, আলী আকবরসহ চারজন মিলে মারিয়াকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে এবং শ্বাসরোধে হত্যা করে পানিতে ফেলে দেয়।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক অলক কুমার দে তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর বিচার কার্যক্রম শুরু হয় এবং ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এ রায় ঘোষণা করা হয়।
রায় ঘোষণার সময় দণ্ডিত রাকিব ও শাওন আদালতে উপস্থিত ছিলেন, তবে সজিব পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে সাজা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এই রায়কে অনেকেই ন্যায়বিচার হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আরও কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার কথাও জানিয়েছেন।