দেশের জার্সি গায়ে মাঠে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে নজর কেড়েছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অন্যতম ভরসা ঋতুপর্ণা চাকমা। কিন্তু ঘরের ভেতর গল্পটা একেবারে ভিন্ন। ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত তার মা ভূজোপতি চাকমা জীবন-মৃত্যুর লড়াই করছেন। আর্থিক সংকটে থেমে গেছে তার চিকিৎসা।
রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার পাহাড়ি গ্রাম মগাছড়িতে ঋতুপর্ণার জন্ম। তিন বোনের মধ্যে দু’জন বিবাহিত, একমাত্র ভাই তিন বছর আগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। বাবাকেও হারিয়েছেন ২০১৫ সালে। সংসার সামলে, পরিবারের একমাত্র ভরসা হয়ে এখন জাতীয় দলে খেলছেন ঋতু। পাশাপাশি পড়াশোনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দর্শন বিভাগে।
সাম্প্রতিক এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে মিয়ানমারের বিপক্ষে দুটি গোল করে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন দারুণ এক জয়। তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষেও গোল করেছেন। তবু ঘরে ফিরলে তাকে দেখতে হয় অসুস্থ মাকে, থেমে থাকা চিকিৎসা আর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।
ঋতুপর্ণার বড় বোন পাম্পী চাকমা বলেন, “মায়ের উন্নত চিকিৎসা করানো আমাদের পক্ষে এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সরকারের কাছে ঋতুর আবেদন, মায়ের চিকিৎসা, নিরাপদ আবাসন এবং তাদের কর্মসংস্থান করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিগুলো যেন বাস্তবায়ন করা হয়।”
অসুস্থ ভূজোপতি চাকমা বললেন, “আমি আমার মেয়ের খেলা দেখে গর্ব হয়। কিন্তু খুব কষ্ট লাগে, যখন মেয়েকে সাহস জোগাতে পারি না। চাই সে যেন দেশের হয়ে আরও বড় কিছু অর্জন করতে পারে।”
ঋতুপর্ণার স্কুলজীবনের শিক্ষক ও ক্রীড়া সংগঠক বীর সেন চাকমা বলেন, “ঋতুর ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে সরকারি চাকরি এবং তার মায়ের চিকিৎসা ও ঘর নির্মাণে সরকারের প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি।”
সাফ জয়, জাতীয় স্বীকৃতি, প্রশাসনিক আশ্বাস, সবই এসেছে একসময়। ঘর নির্মাণ, রাস্তা উন্নয়ন, বোনদের চাকরির প্রতিশ্রুতি মিলেছিলো। কিন্তু কেবল কথার মধ্যেই তা আটকে আছে এখনো।
আজ যখন ঋতুপর্ণা দেশের মাঠে গোল করে আলো ছড়াচ্ছেন, ঠিক তখন পাহাড়ি জনপদে তার মা লড়ছেন ক্যান্সারের সঙ্গে, অর্থের অভাবে থেমে গেছে চিকিৎসাও।