সুনামগঞ্জের ছাতকে চুরির অভিযোগে ১৩ বছরের শিশু কামিল আলীকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু নির্যাতনেই শেষ হয়নি, তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করাও হয়েছে। যেখানে তার বয়স দেখানো হয়েছে ২০ বছর।
গত (৩০ জুন) ঘটনাটি ঘটেছে। স্থানীয় একটি সবজির আড়তে কাজ করত শিশুটি। সেখানে তাকে বেঁধে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে মারধর করা হয়। এমনকি তার চোখে শলার খোঁচাও দেওয়া হয়।
কামিল আলীর শরীরজুড়ে আঘাতের চিহ্ন, চোখে এখনও ফোলা। চোখের মণিতে এখনও রক্তাক্ত দাগ স্পষ্ট। চোখে ঝাড়ুর শলা ঢুকিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তার পায়ে, হাতে, মুখে সবখানেই ক্ষত। চিকিৎসকের মতে, আঘাতগুলো গুরুতর এবং শিশু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
ভুক্তভোগী শিশু কামিল আলী ছাতক পৌর শহরের মণ্ডলীভোগ এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা সুহেল মিয়া একজন পিকআপচালক। অভাবের সংসারে হাত বাড়াতে কামিলকে কাজে পাঠানো হয়েছিল স্থানীয় এক সবজির আড়তে। সেখানে রমিজ আলী নামের এক আড়তদারের অধীনে কাজ করত সে।
শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, রমিজ আলীর দুই ছেলে মোস্তাকিন ও মোক্তাদির, এবং তাদের তিন সহযোগী ময়না, সুজন ও কাজল চুরির অপবাদ দিয়ে কামিলের ওপর নির্যাতন চালায়। প্রথমে বেল্ট দিয়ে মারধর করা হয়। এরপর হাত-পা বেঁধে লাঠি ও ঝাড়ু দিয়ে পেটানো হয়। এমনকি ছাদের ওপর থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয় শিশুটিকে। রাতে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলাও করা হয়। মামলায় তার বয়স লেখা হয় ২০ বছর।
পরদিন ১ জুলাই সুনামগঞ্জ শিশু কালিমকে আদালতে তোলা হলে বিচারক মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ জামিন মঞ্জুর করেন এবং বলেন, “শিশু অপরাধ করলেও তাকে শারীরিক নির্যাতন করার অধিকার কারও নেই।”
আদালত শিশুটির চিকিৎসা নিশ্চিত করতে জেলা সিভিল সার্জন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে ১৫ দিনের মধ্যে নির্যাতনকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় পুলিশকে।
কামিল আলী বর্তমানে বাসায় থাকলেও ঘুমাতে পারে না ঠিকভাবে। চোখে এখনও পানি পড়ে, ব্যথা রয়েছে শরীরজুড়ে।
তার মা কল্পনা বেগম বলেন, “আমার ছেলে ভালো করে দেখতে পারে না। প্রচণ্ড কষ্টে আছে।” বাবা সুহেল মিয়ার অভিযোগ, “ওরা এখন আমাদের ভয় দেখাচ্ছে। আপস করতে বলে হুমকি দিচ্ছে।”
অন্যদিকে অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। রমিজ আলী বলেন, “ছেলেটি ছাদ থেকে পড়ে গেছে, কেউ মারেনি।
ছাতক থানার অফিসার ইনচাজ (ওসি) মুখলেছুর রহমান বলেন, “এ বিষয়ে আমি এখন কথা বলতে পারছি না।”