১৪ বছরের কারাভোগ শেষে মুক্তি পেয়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম দাবি করেছেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জামাতের যেসব নেতাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, তারা অন্যায়ভাবে ‘হত্যা’র শিকার হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ১১টায় রংপুরের তারাগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জামায়াতের আয়োজিত শোকরানা মাহফিলে এ কথা বলেন তিনি।
এটিএম আজহার বলেন, “যারা আমাদের বিরুদ্ধে গল্প বানিয়েছিল, তারা আজ চুপ হয়ে গেছে। আমার মুক্তির মধ্য দিয়েই প্রমাণ হচ্ছে, আমাদের বিরুদ্ধে ফাঁসানো অভিযোগই ছিল মূল অস্ত্র। পূর্ণাঙ্গ রায় বের হলে দেখা যাবে, শীর্ষ নেতাদের অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি তো রায়প্রাপ্ত ফাঁসির আসামি ছিলাম। শুধু কার্যকর করার বাকি ছিল। আল্লাহর ইচ্ছায় আমি আজ মুক্ত। কিন্তু আমাকে ফাঁসিতে ঝোলাতে চাওয়া বিচারপতিরা কোথায়? তাদের এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না।”
এটিএম আজহার অভিযোগ করেন, আদালত একসময় রাজনৈতিক প্রভাবের অধীন ছিল। তবে এখন মানুষ আদালতের ওপর আস্থা রাখতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, “এ হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, সরকারকে অনুরোধ করব—তাদের বিচারের আওতায় আনুন। তা না হলে দেশে আইনের শাসন টিকবে না।”
আজহারুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “যে অপরাধের জন্য আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, আল্লাহর কসম, আমি সে অপরাধে বিন্দুমাত্র জড়িত নই। মিথ্যা সাক্ষ্য, মিথ্যা রায়—এই ছিল আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার প্রকৃতি।”
তিনি বলেন, “তিন কিলোমিটার দূর থেকে আমাকে কেউ দেখেছে বলে সাক্ষ্য দিয়েছে। এর মধ্যে বাড়িঘর ছিল, গাছ ছিল, এটা কি সম্ভব? বিচারপতিরা কি একবারও ভেবে দেখেননি? বিবেক কোথায় ছিল তাদের?”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “২০০৯ সালের পর থেকে শুধু জামায়াত-শিবির নয়, যারা সরকারবিরোধী ছিলেন, সবাই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৫ আগস্টের ঘটনার পরই মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে। শুধু ব্যক্তি স্বাধীনতা নয়, দেশের ভূখণ্ডও স্বাধীন হয়েছে।”
জাতীয় রাজনীতির প্রসঙ্গে এটিএম আজহার বলেন, “দেশে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। শকুনেরা ঘাপটি মেরে বসে আছে, সুযোগ খুঁজছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।”
ভবিষ্যৎ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমরা চাই তাড়াতাড়ি নির্বাচন হোক। এপ্রিলের মধ্যে প্রস্তুতি শেষ করে নির্বাচনে যেতে পারি ইনশাআল্লাহ। তবে সে নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়, সে দাবি থাকবে। আগের মতো ভোট ডাকাতি আর মানুষ মেনে নেবে না।”
এসময় রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে তিনি সেখানকার মানুষের কাছে ভোট চেয়েছেন তিনি।
শোকরানা মাহফিলে আরও বক্তব্য দেন দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, রংপুর মহানগরের আমির এটিএম আজম খান, জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানী ও মহানগর ছাত্র শিবির সভাপতি নুরুল হুদা প্রমুখ।