গত বছরের মর্মান্তিক ট্রাজেডির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়েই হিংসা-বিদ্বেষ ও পাপমোচনে লক্ষে এবারও ‘জয় জগন্নাথ’ ধ্বনিতে মুখরিত হাজারো ভক্তের পদচারণায় শুক্রবার বগুড়ায় উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ‘শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা’।
হিন্দু তথা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেব হলেন জগতের নাথ বা জগতের ঈশ্বর। যিনি জগতের ঈশ্বর তার অনুগ্রহ ও কৃপা লাভ করলে মানুষের মুক্তি লাভ হবে। এ বিশ্বাস থেকেই জগন্নাথ দেবের মূর্তি নিয়ে রথযাত্রার আয়োজন করে থাকেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
প্রতি বছরের ন্যায় প্রতি আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে আয়োজিত হয় এই রথযাত্রা। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) এর ব্যবস্থাপনায় দিনটি শুরু হয় সেউজগাড়ি ইসকন মন্দিরে অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মাধ্যমে। এরপর ধাপে ধাপে অনুষ্ঠিত হয় ধর্মীয় আলোচনা, ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে পালিত হয় মূল রথযাত্রা অনুষ্ঠান।
শুক্রবার (২৭ জুন) বেলা ২টার দিকে বিকেলে শহরের সেউজগাড়ি ইসকন কার্যালয় থেকে রথযাত্রার উদ্বোধন করেন ইসকন বগুড়ার অধ্যক্ষ খরাজিতা কৃষ্ণ দাস। এসময় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য দিলীপ কুমার দেব, বগুড়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল রায়, সংগঠনের সাবেক সভাপতি অমৃত লাল সাহা, পুলিশ লাইন্স শিব মন্দির কমিটির সভাপতি আনন্দ মোহন পাল, জাতীয় ক্রীড়াবিদ গোপাল তেওয়ারী, চঞ্চলমোহন রায়, পূজা উদযাপন পরিষদ বগুড়া পৌর কমিটির সভাপতি পরিমল প্রসাদ রাজ, সাধারণ সম্পাদক সুজিত তালুকদার, জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গৌতম দত্ত সহ ধর্মীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

শহরের এই অন্যতম বড় রথযাত্রা শহরের সেউজগাড়ি থেকে শুরু হয়ে কেন্দ্রস্থল সাতমাথা হয়ে থানামোড়, মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল হয়ে কালিতলা থেকে ঘুরে পুনরায় সেউজগাড়ী মন্দিরে(জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ী) গিয়ে সমাপ্ত হবে। উল্টো রথযাত্রা অনুষ্ঠানের আগ পর্যন্ত রথযাত্রার মূল উৎসব এই শিব মন্দিরেই পালিত হবে।
একই দিনে চেলোপাড়া হরিবাসর মন্দির থেকে বের হওয়া আরেকটি রথযাত্রা, প্রতি বছরের মতো এবারও দত্তবাড়ি দেবসেবা ট্রাস্টি মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। এই আয়োজনেও ভক্তদের সরব উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া। আয়োজকরা জানান, গত বছরের দুর্ঘটনায় নিহত সাত পূণার্থীর আত্মার শান্তি কামনা এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতার প্রার্থনায় এবারের রথে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। উল্লেখ্য, গতবার রথটির উচ্চতা ছিল ৩২ ফুট, তবে এবছর তা কমিয়ে ১৫ ফুটে আনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় পুরো আয়োজন জুড়েই যানজট অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল, যা স্বস্তি এনে দেয় ভক্ত-দর্শনার্থীদের মধ্যে।
এইবছর রথযাত্রার আনুষ্ঠানিকতা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ পৌর কমিটির সভাপতি পরিমল প্রসাদ রাজ বলেন, প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাঝে তারা খুব সুন্দরভাবে রথযাত্রা উৎসবের সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন।
তিনি জানান, এবারের রথযাত্রায় ভক্ত-দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে ইসকনের স্বেচ্ছাসেবীদের পাশাপাশি পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকেও প্রায় ৫ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন। আয়োজকদের মতে, আগামী ৫ জুলাই, শনিবার ‘উল্টো রথযাত্রা’র মাধ্যমে এই আটদিনব্যাপী ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার পরিসমাপ্তি ঘটবে।
উল্লেখ্য, সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীদের মতে, রথযাত্রার পুণ্য তিথিতে নিজ নিজ রথে প্রভু জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্র শোভাযাত্রা সহকারে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে নিজ মন্দির থেকে সপ্তাহকালের জন্য মাসির বাড়ি গমন করেন। এই বেড়াতে যাওয়ার উৎসবই রথযাত্রা। রথযাত্রা হিন্দুধর্মের, বিশেষত প্রভু জগন্নাথের ভক্তদের কাছে একটি পুণ্য উৎসব এবং পুণ্য তিথিও। এই পুণ্য তিথিতে শ্রী জগন্নাথ ধাম পুরী ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে (যেখানে জগন্নাথদেবের ভক্ত বর্তমান) মহাসমারোহের সঙ্গে রথযাত্রা পালিত হয়। হিন্দুশাস্ত্র মতে রথের দড়ির স্পর্শে (দড়ি টানলে) পুণ্যলাভ হয়।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও উৎসবমুখর ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশের মধ্য দিয়ে বগুড়ার শেরপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জেলার শেরপুর উপজেলার কেন্দ্রীয় শ্রীশ্রী জগন্নাথ মন্দির কমিটির উদ্যোগে সুসজ্জিত রত্রযাত্রা শুক্রবার (২৭ জুন) বেলা ২টার দিকে শহর প্রদক্ষিণ শুরু করে। এসময় শেরপুর শহর বিএনপি’র সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র স্বাধীন কুমার কুন্ডু, শেরপুর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সংগ্রাম কুমার কুন্ডু, সাপ্তাহিক তথ্যমালার সম্পাদক সুজিত কুমার বসাক, শেরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি দীপক কুমার সরকার, টাউনবারোয়ারী রাধা গোবিন্দ মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রদীপ কুমার সাহা, শ্রীশ্রী জগন্নাথ মন্দির পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি প্রকাশ সরকার, ডা. অরুনাংশ মন্ডল, অপরেশ বসাক, বৈদ্যনাথ সরকার, শহর পূজা উদযাপন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৌরভ অধিকারী শুভ, ভোলানাথ তাম্বুলী, পার্থ সারথী সাহা প্রমুখ।
একই দিনে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) উদ্যোগে ও দত্তপাড়া মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে পৃথক দুটো ছোট রথ বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করেন। ঢাক-ঢোলসহ রথযাত্রায় বিভিন্ন বয়সী শত শত নারী-পুরুষ ভক্ত দেবতার নাম জপ, কীর্তনসহ পুজো অর্চনা পালন করেন।
রথযাত্রার পুণ্য তিথিতে নিজ নিজ রথে প্রভু জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্র শোভাযাত্রা সহকারে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে নিজ মন্দির থেকে সপ্তাহকালের জন্য মাসির বাড়ি গমন করেন। এই বেড়াতে যাওয়ার উৎসবই রথযাত্রা। রথযাত্রা হিন্দুধর্মের, বিশেষত প্রভু জগন্নাথের ভক্তদের কাছে একটি পুণ্য উৎসব এবং পুণ্য তিথিও। এই পুণ্য তিথিতে শ্রী জগন্নাথ ধাম পুরী ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে (যেখানে জগন্নাথদেবের ভক্ত বর্তমান) মহাসমারোহের সঙ্গে রথযাত্রা পালিত হয়। হিন্দুশাস্ত্র মতে রথের দড়ির স্পর্শে (দড়ি টানলে) পুণ্যলাভ হয়।
শেরপুর কেন্দ্রীয় শ্রীশ্রী জগন্নাথ মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী প্রদীপ কুমার কুন্ডু বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছে। আশা করি সুন্দরভাবেই শেষ করতে পারবো।
সনাতন ধর্মীয় এই উৎসবকে কেন্দ্র করে কেউ যেন কোন বিশৃঙ্খলা না করতে পারে সেই লক্ষ্যে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় বলে অফিসার ইনচার্জ এস.এম মঈনউদ্দিন জানিয়েছেন।
এদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা সদরে রথযাত্রা উপলক্ষে দিন ব্যাপী বসে রথের মেলে। মেলায় মাটি, কাঠ ও লোহার তৈরি আসবাবপত্র, গৃহস্থালী সামগ্রী, কসমেটিক্স, খেলনা, মনোহারী ও মিষ্টির দোকান বসে।
রথটি বিকেলে মহিপুর বারইপাড়ার মন্দিরে ভোগ নিবেদন শেষে শহরের গোশাইপাড়ায় অবস্থিত গুন্ডিচা মন্দিরে, যা জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি হিসেবে পরিচিত, সাতদিন অবস্থান করবে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, আগামী ৫ জুলাই শনিবার ‘উল্টো রথ টানার’ মাধ্যমে শেষ হবে এই আটদিনব্যাপী ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালা।