ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীতে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী গঙ্গাস্নান। প্রতিবছর চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রৈয়োদশীতে এই গঙ্গাস্নান অনুষ্ঠিত হয়। ধর্মপ্রাণ ভক্তরা দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন এই পবিত্র অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্ত-পুণ্যার্থীরা গোকর্ণঘাট তিতাস নদীর তীরে এসে সমবেত হন। তিথি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা গঙ্গাস্নানে অংশ নেন। এই সময় নদীতে ভক্তদের ঢল নামে, চারিদিকে ধর্মীয় আবহ সৃষ্টি হয়।
গঙ্গাস্নান উপলক্ষে নদীর উভয় পাশে বসেছে ঐতিহ্যবাহী লোকজ মেলা। বিভিন্ন রকমের হস্তশিল্প, মিষ্টান্ন ও ঐতিহ্যবাহী খাবার নিয়ে দোকানিরা হাজির হয়েছেন মেলায়। মণ্ডা-মিঠাই, হাওয়াই মিঠাইসহ বাহারি পসরা নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ মেলায় আনন্দ উপভোগ করছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে এই প্রাণবন্ত উৎসব।
পবিত্র স্নান শেষে ভক্ত স্বস্তিকা দাস গণমাধ্যমে বলেন, “প্রতিবছর আমরা এই গঙ্গাস্নানে অংশগ্রহণ করি। এবারও এসেছি। নদীতে স্নানের পর ভগবানের কাছে নিজের ও পরিবারের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করেছি। পাশাপাশি দেশের সব মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্যও প্রার্থনা জানিয়েছি।”
পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পাদনে নিয়োজিত পুরোহিত নিমাই চক্রবর্তী জানান, “এই পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করলে মাতৃপক্ষ ও পিতৃপক্ষ জল পিণ্ড পেয়ে ইহলোকে থাকা সন্তানদের আশীর্বাদ করেন।”
স্নান, পূজা ও পারলৌকিক ক্রিয়ার পাশাপাশি গঙ্গাস্নান উপলক্ষে মিলিত হয় ধর্মীয় ভক্তিমূলক পরিবেশনা। ভক্তদের কীর্তন, ধর্মীয় গান ও পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় এই মহতী আয়োজন।
গঙ্গাস্নান উপলক্ষে স্থানীয় প্রশাসনও ছিল সতর্ক। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ভক্তদের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছিল অস্থায়ী চিকিৎসা শিবির ও বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ।
তিতাস নদীর পবিত্র জলে গঙ্গাস্নানের এই ঐতিহ্য যুগ যুগ ধরে বহমান। ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে এটি রূপ নিয়েছে এক মহতী উৎসবে, যেখানে একসাথে মিলিত হন হাজারো ভক্ত, পুন্যার্থী ও দর্শনার্থী।