গ্রীষ্মের প্রচণ্ড রোদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শহরের রাস্তা-ঘাটে এখন ভিড় জমাচ্ছে তালের শাঁস। মুখে দিলে যেন শান্তির পরশ—কিন্তু দামে যেন জ্বালার আগুন। মাত্র দুই টাকায় গাছ থেকে কেনা একটি শাঁসই এখন টাঙ্গাইল শহরে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।
শহরের কলেজ গেট, আদালত চত্বর, বাসস্ট্যান্ড, বেবীস্ট্যান্ড—প্রায় প্রতিটি মোড়েই বসেছে অস্থায়ী তাল-বাজার। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবাইকে দেখা গেছে সেই শাঁস কিনতে ভিড় জমাতে। শ’ শ’ তাল সাজিয়ে বসেছেন মৌসুমি বিক্রেতারা।
তাদের কাছেই পাওয়া গেল তালের বর্তমান হিসাব। কাঁচা তাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, আর একটি শাঁস বা কোষ ১০ টাকা করে। তবে সুস্বাদু শাঁস খেতে হলে অনেক ক্ষেত্রেই ২৫-৩০ টাকা গুণতেই হচ্ছে ক্রেতাদের।
ব্যবসায়ীরা জানান, টাঙ্গাইলে তালগাছ কম। বেশিরভাগ তালই আসে সাতক্ষীরা, ফরিদপুর ও নাটোর থেকে। ট্রাকে করে তাল এসে unload হয় ময়মনসিংহ রোডের সিঅ্যান্ডবি অফিস এলাকায়। সেখান থেকেই খুচরা বিক্রেতারা তাল কিনে শহরে বিক্রি করেন।
ফরিদপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী নাসির মিয়া জানান, একটি তালগাছ ৩০০-৪০০ টাকায় কেনা হয়। প্রতি গাছে দেড়শ’ টাকায় শ্রমিক দিয়ে তাল কাটাতে হয়। গড়পড়তা একেকটি তালের খরচ পড়ে ৪-৫ টাকা, বিক্রি করেন ৮-৯ টাকায়। তবে কখনও বাজারে তালের পরিমাণ বেশি হলে সিন্ডিকেট ও বাকি বিক্রির কারণে লোকসানও হয়।
সাতক্ষীরার আরেক পাইকার মো. মিজানুর রহমান জানান, গড়ে একেকটি কাঁচা তালে ৬-৭ টাকা খরচ পড়ে, যা বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়।
তাল কিনতে আসা রজব আলী বললেন, “আগে বাড়িতে তালগাছ ছিল, এখন নেই। শুধু শাঁস খেয়েই পুরোনো দিনের কথা মনে করি।”
ক্রেতা রহিমা রহমান বলেন, “তালের শাঁস শরীরের জন্য খুব উপকারী, কিন্তু গাছ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। আমাদের উচিত এখনই অন্তত একটি করে তালগাছ রোপণ করা।”
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আশেক পারভেজ জানান, তালের শাঁসে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি, জিংক, আয়রন, ক্যালসিয়ামসহ নানা পুষ্টিগুণ। কিন্তু তালগাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, রাস্তাঘাট প্রশস্তকরণ ও মানুষের অবহেলা।
তিনি বলেন, “একটি তালগাছ ১০-১২ বছর পর ফল দিতে শুরু করে। এটি শুধু ফল নয়, বজ্রপাত প্রতিরোধ, মাটি সংরক্ষণ ও পানির স্তর ঠিক রাখতেও সহায়ক।”