দেশজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এক ভয়াবহ চর্মরোগ—স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া। হাসপাতালগুলোতে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর ভিড় বেড়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন, নীরবে একটি ‘ছোঁয়াচে মহামারি’ ছড়িয়ে পড়ছে, যার প্রভাবে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
চুলকানি দিয়ে শুরু হয়, পরে সারা গায়ে লালচে র্যাশ। কিছু ক্ষেত্রে রক্তও বের হয় ক্ষতস্থান থেকে। এমনই এক রোগে কষ্ট পাচ্ছে রাজধানীর চার বছর বয়সী শিশু নূর ফাতেমা। তার মা বলেন, “আগেও চিকিৎসা করিয়েছিলাম, তখন ঠিক হয়েছিল। কিন্তু আবার হয়েছে। এখন অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। তাই হাসপাতালে এসেছি।”
একমাত্র নূর ফাতেমা নয়, একই ধরনের উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিনই হাসপাতালে আসছেন শত শত রোগী। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে এসেছেন একটি পরিবারের চার সদস্য। প্রথমে একজনের শরীরে র্যাশ দেখা দেয়, তারপর বাড়ির অন্যরাও আক্রান্ত হন।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, স্ক্যাবিস একটি ছোঁয়াচে রোগ, যা সহজেই একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়ে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু, বয়স্ক এবং যারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাস করছেন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহেদ পারভেজ গণমাধ্যমে বলেন, “এটা এমন এক রোগ, যা নিয়ে লজ্জা বা অবহেলার কারণে অনেকেই চুপচাপ ভুগছেন। অথচ পুরো দেশজুড়ে সংক্রমণ বাড়ছে। এটা এখন নীরব মহামারি।”
তিনি আরও বলেন, “বিনা পরামর্শে ওষুধ খাওয়ার প্রবণতা এবং সঠিক চিকিৎসার অভাবেই রোগটি সহজে ভালো হচ্ছে না। এজন্য জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি।”
চিকিৎসকদের মতে, স্ক্যাবিস সাধারণত হাতের আঙুলের ফাঁক, কব্জি, নাভি, গোপনাঙ্গ এবং শরীরের ভাঁজযুক্ত জায়গায় বেশি হয়। এর উপসর্গ মূলত রাতের দিকে বাড়ে। রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় শুধু একজন নয়, একই ঘরে থাকা সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে—এমন পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কী করণীয়?
শরীরে অস্বাভাবিক চুলকানি বা র্যাশ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কোনো ওষুধ বা মলম ব্যবহার করার আগে অবশ্যই চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি।
ঘরের প্রত্যেক সদস্যকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে।
পরিপূর্ণ চিকিৎসা না নিয়ে চিকিৎসা বন্ধ করলে সংক্রমণ আবার ফিরে আসতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষয়টি অবহেলা না করে এখনই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।