বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার (২৪ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
রোববার (২৩ মার্চ) সচিবালয়ে আয়োজিত এক সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা বলেন, “এবারের নববর্ষ উদযাপনে নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। এটি শুধুমাত্র বাঙালির উৎসব নয়, বরং দেশের সকল জাতিসত্তার জন্য একটি সমন্বিত উৎসব। তাই শোভাযাত্রার নামও এমন হওয়া উচিত, যাতে সবাই নিজেকে এর অংশ মনে করতে পারে।”
নববর্ষের শোভাযাত্রা এবার নতুন রঙ, নতুন সুর ও নতুন অভিব্যক্তি নিয়ে আসবে বলে জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “এবার চারুকলা থেকে বের হওয়া শোভাযাত্রায় সত্যিকারের পরিবর্তন দেখতে পাবেন সবাই। এখনই বিস্তারিত কিছু জানাতে চাই না—এটি এক ধরনের ‘টিজার’। যারা অংশ নেবেন, তারাই নতুনত্ব উপলব্ধি করতে পারবেন।”
শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের বিষয়ে ফারুকী বলেন, “শোভাযাত্রার নাম একবার পরিবর্তন হয়েছে। এটি প্রথমে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে শুরু হয়েছিল, পরে হয়েছে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। এখন যদি সবাই সম্মত হন, তাহলে নতুন নামে পরিবর্তন হতে পারে। তবে এটি একান্তভাবেই সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।”
তিনি আরও বলেন, “এটি আর শুধু বাঙালির শোভাযাত্রা নয়, এটি হবে চাকমা, মারমা, গারো, ত্রিপুরাসহ সকল জাতিসত্তার সম্মিলিত আয়োজন। তাই এমন একটি নাম প্রয়োজন, যা কাউকে আলাদা না করে বরং সবাইকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসে।”
নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “ইউনেস্কো আমাদের শোভাযাত্রাকে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে স্বীকৃতি দিয়েছে, তবে এবার তারা আরও খুশি হবে। কারণ, আমরা এটিকে আরও বড় পরিসরে, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে উদযাপন করতে যাচ্ছি। এতদিন আমরা অনেকগুলো জাতিগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে এসেছি, এবার সেটি সংশোধন করছি।”
এবারের নববর্ষ উদযাপনে থাকছে নানা আয়োজন— শিল্পকলা একাডেমিতে রক কনসার্ট – যেখানে বাংলা ব্যান্ডের পাশাপাশি চাকমা, গারো ও মারমা শিল্পীরা অংশ নেবেন।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাউল ও ফকিরদের সংগীতানুষ্ঠান। সংসদ ভবনের সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চীনের সহযোগিতায় বিশেষ ‘ড্রোন শো’ – যেখানে বাংলার ঐতিহ্যবাহী চিত্র ফুটিয়ে তোলা হবে।
রাজধানীর ধানমন্ডি ৮ নম্বরের রবীন্দ্র সরোবরে সুরের ধারার গানের অনুষ্ঠান ও মেলার আয়োজন।
এবারের উৎসব উদযাপনে বাজেট দ্বিগুণ করা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “ভিন্ন ভাষাভাষী সম্প্রদায়ের বসবাসকারী জেলাগুলোতে আরও বেশি বরাদ্দ দেওয়া হবে। আগামীকালই এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে।”
নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, “সরকার পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। তবে এবার আর শোভাযাত্রার সামনে-পেছনে র্যাব দিয়ে ঘেরাও করতে হবে না। কারণ এটি এখন শুধুমাত্র কোনো একটি গোষ্ঠীর নয়, বরং সকল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এটিকে নিজেদের উৎসব হিসেবে বিবেচনা করে।”
উৎসবের প্রাণবন্ততা বাড়াতে সবাইকে শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “এটি শুধুমাত্র একটি শোভাযাত্রা নয়, এটি আমাদের ঐক্যের প্রতীক। তাই সবাই একসঙ্গে এসে নববর্ষকে রঙিন করে তুলুন।”