বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনেই কুমিল্লা নগরের রাজগঞ্জ বাজারে বসে এক ব্যতিক্রমী মেলা—শুধুই মাছের। শত বছরের পুরোনো এই ঐতিহ্য ধরে রেখেই এবারও জমজমাট কাতলা মাছের মেলা বসেছে। সোমবার (১৪ এপ্রিল) ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতার মিলনমেলায় মুখর রাজগঞ্জ বাজার।
রাজগঞ্জ বাজার ছাড়িয়ে পুরোনো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই ধারে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে মাছের পসরা। মেলায় চোখে পড়েছে বিশাল আকারের কাতলা মাছ—কখনো জীবিত অবস্থায় পানির ট্যাংকে, আবার কোথাও ডালায় লাফাতে থাকা মাছ। বাজার জুড়ে শুধু মাছের ঘ্রাণ আর দরদামের আওয়াজ।

মেলায় বিক্রি হওয়া মাছের প্রায় ৮০ শতাংশই কাতলা। ওজন ৩ কেজি থেকে শুরু করে ২০ কেজি পর্যন্ত। দামে বৈচিত্র্যও রয়েছে—প্রতি কেজি ৪০০ টাকা থেকে ১,১০০ টাকা পর্যন্ত। সবচেয়ে চাহিদা পুকুর ও দিঘির চাষের জীবন্ত কাতলা মাছের। পাশাপাশি রুই, মৃগেল ও কার্প মাছও বিক্রি হচ্ছে ভালো দরে।
এইবার অন্তত ৩০০ মাছ বিক্রেতা এসেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, তারা বলেন ৪৫ বছর ধরে রাজগঞ্জ বাজারে মাছ বিক্রি করে আসা আবুল হাশেম।
চান্দিনা উপজেলার মোহনপুর থেকে মেলায় মাছ নিয়ে এসেছেন হরি দাস। তাঁর ভাষায়, “বাপ-দাদার আমল থেকে আমরা এই মেলায় মাছ বেচি। এবার বেশি মাছ আনছি, বিক্রিও ভালোই হচ্ছে।”
ক্রেতারাও দারুণ আগ্রহ নিয়ে অংশ নিচ্ছেন। কুমিল্লা নগরের বিষ্ণুপুর এলাকার এক ক্রেতা বলেন,“৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই মেলা থেকে কাতলা মাছ কিনি। এবছর ৬ কেজির কাতলা কিনেছি ৩ হাজার ৪ টাকায়।” তবে দাম নিয়ে কেউ কেউ কিছুটা হতাশ।
মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, “দুই দিন আগে যেই মাছ ৫৫০ টাকায় কিনেছি, সেটা আজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়।”
এই মাছের মেলা শুধুই বাণিজ্যিক আয়োজন নয়, বরং কুমিল্লার লোকজ সংস্কৃতির একটি জ্বলন্ত নিদর্শন।
কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর জানান, “মেলার সঠিক শুরুকাল জানা না গেলেও এর বয়স শত বছরের বেশি। নববর্ষে আত্মীয়দের বাড়িতে বড় মাছ পাঠানো কিংবা অতিথি আপ্যায়নের রেওয়াজ এখনো টিকে আছে।”
এই ঐতিহ্যবাহী কাতলা মাছের মেলা শুধু কুমিল্লাবাসীর নয়—এটি হয়ে উঠেছে একটি জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্পদ। নববর্ষের আনন্দের সঙ্গে মাছের উচ্ছ্বাস মিশে যে আবহ তৈরি হয়, তা দেখতে রাজগঞ্জ বাজারে একবার যেতেই হয়।