বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে সামনে রেখে দেশবাসীর প্রতি অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি নতুন বছরের সূচনাকে ‘নতুন বাংলাদেশের প্রথম নববর্ষ’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, “চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান আমাদের সামনে একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগ যেন আমরা না হারাই। চলুন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক এবারের নববর্ষে আমাদের অঙ্গীকার।”
নতুন উদ্যমে দেশ গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “পয়লা বৈশাখ শুধু একটি দিন নয়, এটি আমাদের মহামিলনের প্রতীক, আমাদের সংস্কৃতির মহোৎসব। এই দিনে আমরা সবাই মিলে অতীতের গ্লানি ভুলে সামনে এগিয়ে চলার শপথ নিই। নববর্ষ হোক নতুন প্রত্যয়ের, সাহসের ও সম্মিলিত অগ্রযাত্রার প্রতীক।”
তিনি বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যিক গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “বাংলা সনের সূচনা হয়েছিল কৃষিজ জীবনের প্রয়োজনে—ফসলি হিসাব রাখার জন্য। আজো আমাদের কৃষক বাংলা তারিখ ধরে মাঠে নামেন, বীজ বোনেন, ফসল তোলেন। এই ঐতিহ্য আমাদের শেকড়ের সঙ্গে যুক্ত রাখে।”
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, “বাংলা নববর্ষের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ‘হালখাতা’ আজো আমাদের হাট-বাজারে জীবন্ত। শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জের হালখাতার উৎসব আমাদের বাণিজ্যিক সংস্কৃতিরও অংশ। উদ্যোক্তারা এই দিনে শীতল পাটি, মাটির হাঁড়ি-পাতিল, হাতপাখা, কাঠের খেলনার মতো ঐতিহ্যবাহী পণ্য দিয়ে নিজেদের সৃজনশীলতা তুলে ধরেন।”
তিনি নববর্ষের উৎসবে জাতিগত বৈচিত্র্যের গুরুত্বও তুলে ধরে বলেন, “এবার পাহাড় ও সমতলের নানা জাতিগোষ্ঠী চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষে যুক্ত হয়েছেন বৃহত্তর আয়োজনে, যা আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।”
বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের ঐতিহ্য শুধু নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে পৃথিবীর সামনে উপস্থাপন করাই আমাদের দায়িত্ব। নববর্ষের দিনটি সেই সুযোগ এনে দেয় নতুন প্রজন্মের সামনে আমাদের সংস্কৃতিকে জীবন্তভাবে উপস্থাপন করার।”
নববর্ষের শুভক্ষণে দেশবাসীর প্রতি শুভকামনা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “নববর্ষ ১৪৩২ হোক আশার আলো, সাম্যের সেতু। আসুক নতুন দিন, নতুন সম্ভাবনা। এই নববর্ষ আমাদের জন্য হয়ে উঠুক নতুন শক্তি ও গভীর আনন্দের উন্মোচন।”
তিনি নববর্ষের সকল আয়োজনের সফলতা কামনা করেন এবং দেশবাসীকে উৎসবমুখর, আনন্দঘন একটি নববর্ষ উদযাপনের আহ্বান জানান।