পহেলা বৈশাখের আগমুহূর্তে উৎসবের সাজে সেজেছে গোটা দেশ। কিন্তু বাঙালির ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী পান্তার সঙ্গে ইলিশের জুড়ি মেলানো যেন এবার সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। কক্সবাজার উপকূলে ফিরে আসা ট্রলারগুলোয় দেখা যাচ্ছে একরাশ হতাশা—ইলিশ আছে, তবে সামান্যই।
রোববার (১৩ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দেখা যায়, একের পর এক মাছ ধরার ট্রলার ফিরছে বাঁকখালী নদী পেরিয়ে। সরকারি ৫৮ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার আগে শেষ মুহূর্তের এই যাত্রায় মাছের ঝুড়ি থাকলেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা খুবই কম।
ইলিশের দেখা মিললেও বাজারে তার দাম যেন স্বর্গচুম্বী! ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় ইলিশের ঘাটতি থাকায় প্রতিটি মাছ বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে।
এফবি ‘মায়ের দোয়া’ ট্রলারের মাঝি রহিম জানালেন, “সাগরে ভেবেছিলাম প্রচুর ইলিশ পাব। কিন্তু মাত্র ২০০টা ইলিশ নিয়ে ফিরেছি। ৩ লাখ টাকা খরচ করে যা পেয়েছি, তা দিয়ে অর্ধেক টাকাও উঠছে না।”
জেলে ইব্রাহিম খালেদের কণ্ঠেও হতাশা—“এবার সাগরে ইলিশ কম। লোকসান গুনে বাড়ি ফিরছি। ধার-দেনা করে দিন কাটছে।”
অবতরণ কেন্দ্রে দেখা যায়, প্রতিটি ট্রলার থেকে নামছে ১০ থেকে ১৫ ঝুড়ি ইলিশ। সঙ্গে সঙ্গে তা ঘিরে ধরছেন ব্যবসায়ীরা। মুহূর্তেই মাপঝোক করে প্যাকেটজাত করে পাঠিয়ে দিচ্ছেন ঢাকার বাজারে।
মৎস্য ব্যবসায়ী ফারুক বলেন, “১ কেজির ইলিশ ২৫০০ টাকা, ১২০০ গ্রামেরটি ৩০০০ টাকা, আর ১৫০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ টাকায়! গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ দাম। কিন্তু পহেলা বৈশাখ বলে মানুষ কিনছেও।”
আরেক ব্যবসায়ী ফেরদৌস আলী জানালেন, “ঢাকায় চাহিদা তুঙ্গে। তাই যেটুকু ইলিশ পাচ্ছি, তা দ্রুত প্যাকেট করে পাঠিয়ে দিচ্ছি রাজধানীতে।”
তবে এই উন্মাদনার পেছনে আছে এক কঠিন বাস্তবতা। ট্রলার মালিক সমিতির মুখপাত্র মো. আলমগীর জানালেন, “ইলিশ কমে যাওয়ায় এবং সাগরে ডাকাতের উপদ্রবে ট্রলার মালিকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, বাজারে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা।”
কক্সবাজার উপকূলের লাখেরও বেশি জেলের মধ্যে এখনো পর্যন্ত নিবন্ধন পেয়েছেন মাত্র ৬৫ হাজার। ফলে সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেকেই।
বাঙালির বৈশাখী উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ পান্তা-ইলিশ। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে, সেই ইলিশ যেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। জেলেদের চোখে ক্লান্তি, ব্যবসায়ীদের মুখে হতাশা, আর ভোক্তাদের মনে প্রশ্ন—“এবার বৈশাখে ইলিশ খাওয়া যাবে তো?”