বগুড়ার শেরপুরে পৌর শহরের স্যানালপাড়ায় প্রায় কয়েক কোটি টাকার পৈতৃক সম্পত্তি বেদখল, ভাংচুর ও মারপিটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষের দফায় দফায় মারপিট, লুটপাট, ভাংচুরসহ পৈতৃক বসতবাড়ি রক্ষা ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাইদুজ্জামান সরকার জিকু নামে এক ভুক্তভোগী। সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডস্থ ‘শেরপুর উপজেলা প্রেসক্লাব’ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ ও দাবি জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে সাইদুজ্জমান জিকু বলেন, পৈত্বিক সূত্রে শেরপুর মৌজায় ৫৩২ নং সিএস, ৫৭০ এমআরআর খতিয়ানভুক্ত সাবেক ৭৭৫ দাগে ৪৪ শতক জমি প্রাপ্ত হয়ে সেখানে বসতবাড়ি নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছি। নামজারির পর বর্তমান সাল পর্যন্ত খাজনাও আমি পরিশোধ করেছি। অথচ একই এলাকার আব্দুল বাছেদের ছেলে আতাউর রহমান রহমান জাল দলিল তৈরি করে উক্ত জমিটির মালিনাকা দাবি করে বসেন। মোমেনা বেগমের কাছ থেকে উক্ত জমিটি কিনেছেন বলে জানিয়েছে আতাউর রহমান। কিন্তু মোমেনা বেগমের এই জমিতে কোনো মালিকানা নেই। এরপরও বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বাড়স্থ হন ভূমিদস্যুখ্যাত আতাউর রহমান। অন্তত ১ ডজন মামলা দায়ের করলেও মামলায় হেরে যান তিনি।
সাইদুজ্জামান সরকার অভিযোগ করে আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে অস্থিরতা তৈরী হয়। আর এই সুযোগে ৬ আগস্ট রাতে আতাউর রহমানের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বাড়িটি দখলে নিতে হামলা চালায়। এসময় ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এরপর ভুক্তভোগী জমির মালিক উপজেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর নিকট সাহায্য চান।
এরপর তারা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে এলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় ভূুমিদস্যুরা। কিন্তু পিছু হটেনি তারা। এমনকি বসতবাড়িটি দখলে নিতে নানা ধরণের পাঁয়তারা চালাচ্ছে ওই চক্রটি। এরই ধারাবাহিকতায় ভূমিদস্যু আতাউর রহমানের নেতৃত্বে ২/৩০০ দুস্কৃতিকারী দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গত (২৪ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে আবারও ওই বাড়িটি দখলের জন্য হামলা চালায়।
এসময় দুস্কৃতিকারীরা পরিবারের সদস্যদের মারধর, বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করে। এতে নারীসহ অন্তত ৪জন আহত হয়। তবে এই হামলার সময় শেরপুর থানার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন এবং তারা কোনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি এমন অভিযোগও করেন ভূক্তভোগী সাইদুজ্জামান। এছাড়া বসতবাড়ি থেকে তাদের উচ্ছেদ করতে স্ব-পরিবারে হত্যার হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। এতে করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ভুক্তভোগীর পরিবার।
তাই এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পৈতৃক বসতবাড়ি রক্ষাসহ নিজদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান তিনি। এসময় পরিবারের নারী সদস্যরা সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত আতাউর রহমান রহমান গণমাধ্যমকে জানান, ১৯৭৬ সালে আমার বাবা মোমেনা বেগমের কাছ থেকে সাড়ে ৩ শতক জায়গা কেনেন এবং বাড়ি ঘর করেন। আমার নামে নামজারি এবং চলমান সালের জুন মাস পর্যন্ত আমার জামির খাজনাও পরিশোধ রয়েছে। আমি সেখানে না থাকায় তারা গায়ের জোরে আমার সম্পত্তি দখল করে রেখেছে।
এ বিষয়ে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম রেজা বলেন, ওইদিন রাতে উভয়পক্ষের মধ্যে মারামারি চলাকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর সদস্য ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। পরবর্তীতে তাদেরকে স্ব-স্ব কাগজপত্র নিয়ে থানা আসতে বলা হয়। তবে ওইদিন আলাদা করে থানায় পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়নি বলে দাবী করেন তিনি।