বই উৎসবের দিন নতুন বই হাতে পেলেন নওগাঁর ৫ লক্ষ ১৫ হাজার শিক্ষার্থী। নতুন বছরের প্রথম দিনে সারা দেশের ন্যায় বিনামূল্যে সরকারি নতুন বই পাওয়ার আনন্দে উচ্ছ্বসিত নওগাঁর কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বছরের প্রথম দিনে জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সোয়া ৫ লক্ষ শিক্ষার্থী হাতে পেলেন নতুন বই। শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে নতুন বই, তা নিয়েই উল্লাসিত শিক্ষার্থীরা। নতুন বই নিতে সকাল থেকেই প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা হাজির হয় নিজ নিজ বিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীদের সাথে বিদ্যালয়ে এসেছেন তাদের অভিভাবকরাও। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে বিদ্যালয়গুলো।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, মাধ্যমিক ও এবতেদায়ী পর্যায়ে জেলার ১১টি উপজেলায় মোট শিক্ষার্থী হয়েছে ২ লক্ষ ৬৩ হাজার ৩৭২ জন। এসব শিক্ষার্থীর জন্য চাহিদা দেওয়া হয়েছিল ৩০ লক্ষ ৬ হাজার ৩২০ টি তারমধ্যে বই এসেছে ১৮ লক্ষ ৩৮ হাজার ৯৫৯ টি। বাকী আছে ১১ লক্ষ ৬৭ হাজার ৩৬১ টি বই। এরমধ্যে এসএসসি সাধারণ শাখায় শিক্ষার্থী রয়েছে ১লক্ষ ৬০ হাজার ৭৬২ জন। এ শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য বইয়ের চাহিদা রয়েছে ১৮ লক্ষ ৩৬ হাজার ৭৮৫ টি তার মধ্যে বই এসেছে ১২ লক্ষ ৬৫ হাজার ৯৮৯ টি, দাখিল শাখায় শিক্ষার্থী রয়েছে ৪৪ হাজার ৭৮০ জন, এ শাখায় বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৬ লক্ষ ৮২ হাজার ৩০৫টি। এরমধ্যে এসেছে ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ৩৭০ টি। এবতেদায়ী শাখায় শিক্ষার্থী রয়েছে ৫০ হাজার ৩১০ টি, এ শাখায় বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৩৯ হাজার ৩২৮টি। এরমধ্যে বই এসেছে ৩ লক্ষ ৮৮ হাজার ৭০০টি। এসএসসি (ভোকেশনাল) শাখায় শিক্ষার্থী রয়েছে ৪ হাজার ৩০০ জন। বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৬৮ হাজার ৬৬০ টি তার মধ্যে বই এসেছে ৫ হাজার ৯৩০ টি, এসএসসি (ভোকেশনাল ট্রেড) শাখায় শিক্ষার্থী রয়েছে ২ হাজার ৯৫০ জন। এ শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য বইয়ের চাহিদা রয়েছে ২১ হাজার ৮৪০ টি। এ শাখার কোন বই আসেনি। দাখিল (ভোকেশনাল) শাখায় শিক্ষার্থী রয়েছে ৫০ জন। এ শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৭৮০ টি। এ শাখায় এ পর্যন্ত কোন বই আসেনি এবং এসএসসি (ইংরেজি ভার্সন) শাখায় শিক্ষার্থী রয়েছে ২২০ জন। এ শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য বইয়ের চাহিদা রয়েছে ২ হাজার ৬৭০টি কিন্তু এ শাখায়ও এ পর্যন্ত কোন বই আসেনি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৪৯৮ জন। এরমধ্যে শিশু শ্রেণীতে রয়েছে ৪২ হাজার ৮১৭ জন শিক্ষার্থী, প্রথম শ্রেণীতে রয়েছে ৫২ হাজার ৭১৩ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীতে রয়েছে ৫১ হাজার ৯৩৭ জন শিক্ষার্থী, তৃতীয় শ্রেণীতে রয়েছে ৫১ হাজার ৪৩১ জন, চর্তুথ শ্রেণীতে রয়েছে ৫২ হাজার ৬৪ জন, পঞ্চম শ্রেণীতে রয়েছে ৫৩ হাজার ৩৫৩ জন শিক্ষার্থী। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বইয়ের চাহিদা ছিল ১২ লক্ষ ৯৭ হাজার ৮৫৫ টি বই। যা শতভাগ আসায় সব শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌঁছানো হয়েছে।
রাণীনগর উপজেলার মধুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.আব্দুল গফুর প্রাং বলেন, নতুন বই হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে যেন খুশির সীমা নেই। সরকারের যুগোপযোগী সিদ্ধান্তে শিক্ষায় অভিভাবকদের শিক্ষা ব্যয়ে কমেছে তাই দেশে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার হারও কমেছে।
ঈশ্বর লক্ষীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. তানভীর ইসলাম তুহিন বলেন, নতুন বই পেয়ে আমি খুশি। আমার খুব ভালো লাগছে। নতুন বই পাওয়া কি যে আনন্দ তা বলে বুঝানো যাবে না।
পত্নীতলা উপজেলার সুবরাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মোসা. মুনিরা বলেন, নতুন কিছু পেলে সব সময় ভালো লাগে। তাই নতুন বই পেয়েও অন্য রকম আনন্দ হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল হাবিব বলেন, জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য দেওয়া চাহিদা মোতাবেক শতভাগ বই এসেছে যা আজ শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
নওগাঁ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, বই উৎসবের দিন জেলার সব স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হচ্ছে আজ। তবে চাহিদা অনুযায়ী সব বই এখনও জেলায় পৌঁছায়নি। আশা করছি খুব তারাতাড়ি বই পৌঁছে যাবে। বই হাতে এলেই আমরা সেগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেবো।