বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় একই পরিবারের দুই সদস্যকে হত্যার ঘটনায় তিন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ঘটনার ছয় দিন পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাত দলের সদস্যদের শনাক্ত করে অভিযান চালায় পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুরে জেলা গোয়েন্দা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান।
নিহতরা হলেন অবসরপ্রাপ্ত মাদরাসা শিক্ষক আফতাব উদ্দিন (৬৫) ও তাঁর পুত্রবধূ রিভা আকতার (২৮)।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, দুপচাঁচিয়ার বেরুঞ্জ গ্রামের আব্দুল হাকিম (৩৪), লক্ষ্মীমণ্ডপ গ্রামের আব্দুল মান্নান (৫০) এবং আদমদিঘির বাসিকোড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৪১)। তাদের মধ্যে হাকিমই এই ডাকাত দলের সর্দার, যার বিরুদ্ধে আগেই সাতটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, হত্যাকাণ্ড ও ডাকাতির মূল পরিকল্পক ছিলেন আফতাব উদ্দিনের পুরোনো কর্মচারী আব্দুল মান্নান। একসময় তিনি আফতাবের সেচপাম্পে কাজ করতেন। পরে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মান্নান এই হত্যাকাণ্ডের ছক কষেন।
ঘটনার দিন ৮ জুলাই রাতে, লক্ষ্মীমণ্ডপ পূর্বপাড়া গ্রামে প্রবেশ করে ডাকাতরা। প্রথমে বৃদ্ধ শিক্ষক আফতাব উদ্দিনকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করে এবং পরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর পাশের ঘরে গিয়ে তার পুত্রবধূ রিভা আকতারকেও একইভাবে খুন করে তারা।
সেই ঘরে থাকা পাঁচ বছর বয়সী শিশু রুকাইয়া তাসনিম মালিহা অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যায়। শিশুটিকে চোখ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল এবং ডাকাতরা তাকে ভয় দেখিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
ডাকাতরা ঘর থেকে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা, স্বর্ণালংকার ও দুটি মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে যায়। পরদিন ৯ জুলাই সকালে স্থানীয়রা দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশকে খবর দেয়। তাদের হাত-পা বাঁধা ও মুখে কাপড় গুঁজে রাখা ছিল। দুপচাঁচিয়া থানায় এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
ডিবি পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ জুলাই দুপুরে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে হাকিম ও মান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৫ জুলাই ভোরে কুড়িগ্রামের চর জামাল গ্রামে অভিযান চালিয়ে রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে স্বর্ণের দুল, চুড়ি, আংটি, দুটি মোবাইল ফোন, একটি ঘড়ি ও নগদ ৭ হাজার ৫০০ টাকা। গ্রেপ্তারদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানায় পুলিশ।