বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী স্থান মহাস্থানগড় এখন ভরে উঠেছে সাধু-সন্ন্যাসী, বাউল ও পুণ্যার্থীদের পদচারণায়। বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবারকে ঘিরে শুরু হয়েছে ফকির-সন্ন্যাসীদের মিলনমেলা ও বৈশাখী উৎসব, যা একদিকে যেমন ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে, তেমনি লোকজ সংস্কৃতিরও বাহক।
বৃহস্পতিবার (০৮ মে) সকাল থেকেই মহাস্থানগড়ের হজরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (রহ.)-এর মাজার এলাকায় শত শত সাধু-সন্ন্যাসী, ভক্ত ও সাধারণ মানুষের ঢল নামে। মাজার চত্বর এবং আশপাশের এলাকা পরিণত হয় উৎসবের শহরে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছর এই সময়টাতে মেলার জন্য গোটা মহাস্থান এলাকা উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। আগে থেকেই বাড়ি বাড়ি অতিথি আমন্ত্রণ জানানো হয়। কেউ রান্না করেন খিচুড়ি, কেউ বা আয়োজন করেন গানের আসর।
এই আয়োজনের পেছনে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও। জনশ্রুতি রয়েছে, এই মাজার এলাকা থেকেই ইংরেজবিরোধী ফকির বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন ফকির মজনু শাহ। বলা হয়ে থাকে, তিনি এখান থেকেই সংগ্রাম চালিয়ে এক পর্যায়ে ইংরেজদের পরাজিত করেছিলেন। সেই বিদ্রোহ ও চেতনার স্মরণেই এই উৎসবের সূচনা—এ যেন সাধু-সন্ন্যাসীদের নিজেদের লড়াই ও ঐতিহ্যের মিলনমেলা।
মাজার সংলগ্ন বিখ্যাত মিলু কটকটি ভান্ডার-এর মালিক মো. মিলু মিয়া বলেন, “মেলা উপলক্ষে এ এলাকায় অন্তত দুই শতাধিক কটকটির দোকান বসেছে। প্রতিবছর কোটি টাকার বেশি কটকটি বিক্রি হয়। এবারও বেচাকেনা জমে উঠেছে।”
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিয়াউর রহমান বলেন, “মহাস্থান মাজারের এই মেলাটি শত বছরের পুরনো। যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকেরাও কাজ করছেন। পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”