বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী প্রায় ৪০০ রাজনীতিবিদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি বাতিল করে নতুনভাবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ জুন) রাতে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে একটি অধ্যাদেশ জারি করে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়।
আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগ থেকে অধ্যাদেশটি প্রকাশিত হয়েছে। একই রাতে এটি গেজেট আকারেও প্রকাশ করা হয়।
নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, শুধু প্রবাসী সরকার নয়, মুক্তিযুদ্ধকালীন আরও চার শ্রেণির ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা না বলে ‘সহযোগী’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন, বিদেশে বিশ্বজনমত গঠনে কাজ করা পেশাজীবী, প্রবাসী সরকারে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সহকারী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও সাংবাদিক এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা।
এর ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামারুজ্জামান, এম মনসুর আলীসহ প্রবাসী সরকারের সঙ্গে যুক্ত সবাই মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় হারালেন।
জানা যায়, এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক সভা হয়েছে। প্রথমে গত ৬ মে এক দফায় ১৯৭০ সালের নির্বাচিত নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে পরে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা ও আপত্তির প্রেক্ষিতে ১৫ মে আইন মন্ত্রণালয় পর্যালোচনার শর্তে খসড়াটি অনুমোদন দেয়। এরপর রাষ্ট্রপতির সম্মতিতে এটি গেজেট আকারে প্রকাশ পায়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেন, “উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক পর্যালোচনার পর অধ্যাদেশটি আইন মন্ত্রণালয়ের যাচাইয়ে যায় এবং তাদের মত অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে তা জারি হয়। খুব শিগগিরই বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা হালনাগাদ করা হবে।”
অধ্যাদেশে নতুনভাবে মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগীর সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, যাঁরা দেশের অভ্যন্তরে অথবা সীমান্ত পেরিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে সরাসরি অস্ত্রহাতে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে লড়েছেন, শুধু তাঁরাই বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত হবেন।
এছাড়া নির্যাতিত বীরাঙ্গনা এবং ফিল্ড হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও সহকারীরাও বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় থাকবেন।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক নেতৃত্বদানকারী, প্রবাসী সরকারের দায়িত্ব পালনকারী, বিদেশে মুক্তিযুদ্ধ প্রচারকারীরা ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।
বর্তমানে বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রয়েছে ৩৬টি শ্রেণি। নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী ‘লাল মুক্তিবার্তা—স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা’ শ্রেণিতে থাকা অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি হারাতে যাচ্ছেন।
এর মধ্যে রয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও জাতীয় চার নেতা, ১৯৭০ সালে নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্য, বিসিএস খেতাবপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় প্রবাসী সংগঠক, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য।
১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী ১৯৭০ সালের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে নির্বাচিত ৪৬৯ জনের মধ্যে ৪০৩ জন গণপরিষদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের বেশিরভাগই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন ভূমিকার সঙ্গে যুক্ত।
তাদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সুবিধা ও স্বীকৃতি পেয়ে আসছিলেন। নতুন অধ্যাদেশের ফলে সেই পরিচয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন এলো।