মসজিদের মাইকে হত্যা সংক্রান্ত মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে বিএনপি’র ১৩ জন নেতা ও কর্মী সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, নগদ টাকা, সোনার গহনা লুটপাট সহ প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতিসাধনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি বগুড়ার শেরপুরের গাড়িদহ ইউনিয়নের বনমরিচা মধ্যপাড়া গ্রামে গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে ঘটে। এ ঘটনায় দুষ্কৃতিকারী স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শনিবার (২ নভেম্বর) বেলা ৪টায় শেরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী মো: গোলাম ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। সম্মেলনে ঘটনার যথাযথ আইনি ব্যবস্থা সহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগী গোলাম হোসেন সরকার। তিনি উপজেলার বন মরিচা মধ্যপাড়া গ্রামের মোফাজ্জল সরকারের ছেলে। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ দেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে ক্ষমতার পট পরিবর্তন হয়। সেই ধারায় আমাদের গ্রামের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র সমর্থিত নেতা কর্মীরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই বসবাস করছিলাম।
হঠাৎ করে শহর থেকে কিছু বৈষম্যবিরোধীরা বনমরিচা গ্রামের চিহ্নিত কতিপয় আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীর বাড়ীঘরে হামলা চালায়। যে ঘটনার সাথে আমরা ভুক্তভোগীগণ কোন ক্রমেই জড়িত ছিলাম না। ওই দিনের ঘটনার পর থেকে আমরা প্রায় শান্তি পূর্ণভাবে বসবাস ও ব্যবসা বানিজ্য করে আসছি। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের প্রায় ২ মাস পরে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বিভিন্নভাবে আমাদের নানাভাবে ক্ষতিসাধনের অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে।
এর ধারাবাহিকতায় গত ৩১ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে এলাকার মসজিদের মাইকে মিথ্যা প্রচার চালানো হয় যে এলাকার একজনকে হত্যা করা হচ্ছে। এমন মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে দেয়ার পর পরই একই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুস ছোবাহান, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা গোলাম রব্বানী, সেলিম মন্ডল, শাহ কামাল, ফজু শেখ, আলহাজ্ব মাস্টার সহ কতিপয় আওয়ামীলীগ নেতার নেতৃত্বে বনমা মধ্যপাড়া গ্রামের প্রায় দেড়’শ থেকে ২’শ লোকজন আমাদের কতিপয় বিএনপি’র সমর্থিত নেতা কমীর বাড়ীঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে, আসবাবপত্রে অগ্নি সংযোগ, এবং প্রত্যেক বাড়ি থেকে নগদ অর্থ, স্বর্ণলঙ্গকার লুটপাট করে।
এসময় তারা একটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেয় এবং আরেকটি মোটর সাইকেল ও অটোরিক্সা ভাংচুর করে। পাশেই একই ঘটনায় মোঃ আমিনুল ইসলাম পৌরসভার কর্মচারী তাহার বসত ভিটায় হামলা চালায়। তার পরিবারের বাকী সদস্যরা প্রাণভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে আইনের আশ্রয় নেয় এবং শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়। পাশাপাশি তার ২ বিঘার জমির উপর ফল গাছের নার্সারির ৩ তিন হাজার বিভিন্ন দেশি ও বিদেশী কলম চারা সহ নষ্ট করে ফেলে এবং বসত ভিটায় অগ্নি সংযোগ করে।
তাদের অতর্কিত হামলায় বাড়ীঘর, আসবাবপত্র ভাংচুর, লুটপাটের শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের মধ্যে বনমরিচা মধ্যপাড়া গ্রামের গোলাম হোসেন, পিতা মোফাজ্জল সরকার এর বাড়ী থেকে সাড়ে ১৯ লাখ নগদ টাকা ও ৫ভরি ওজনের সোনার গহনা, বাদশা সরকার (তিনি একজন ব্যবসায়ী ও তার ছেলে একজন সেনা সদস্য) তার বাড়ী থেকে প্রায় নগদ ২০ লাখ টাকা ও ৩ ভরি ওজনের সোনার গহনা লুট সহ, তছলিম সরকার, বিশা সরকার, মঞ্জু সরকার, আব্দুল মান্নান, আব্দুল হান্নান, আশরাফ আলী, হেলা উদ্দিন, আমিনুল ইসলাম, নয়ন মিয়া, নিলু মিয়া, ও শাহ জামালের বাড়ী ঘর, আসবাবপত্র ভাংচুর করে লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করে। ০৮ থেকে ১০ জন আহত অবস্থায় শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও শজিমেকে বগুড়ায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।
দেশে বর্তমানে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময়ে ওইসব দুষ্কৃতিকারী আওয়ামীলীগ সমর্থিত নেতাকর্মীরা তাদের অবৈধ দাপট ও ক্ষমতার টিকে রাখতে পুনরায় উজ্জীবিত হয়ে আমাদের মত নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় মানুষদের ক্ষতিসাধন ও প্রাণনাশের নানাবিধ হুমকী-ধামকি অব্যাহত রেখেছে। তাদের ভয়ভীতিতে আমরা এলাকায় শান্তিপ্রিয়ভাবে বসবাস ও ব্যবসা বানিজ্য করতে পারছিনা। তবে ওই দিনের ঘটনার পর সেনাবাহিনী ও শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করায় এলাকা কিছুটা শান্ত হয়। তবে আবারও তাদের দ্বারা ক্ষতি সাধনের আশংঙ্কা বোধ করছি। এমন অবস্থায় আমরা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। তাই ঘটনার প্রেক্ষিতে ওইসব চিহ্নিত সন্ত্রাসী শ্রেণীর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা সহ দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগীরা