বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের রনবীর বালা প্রাথমিক বিদ্যালয়-এর স্থানান্তর নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি বিদ্যালয়টি রাস্তার উত্তর পাশ থেকে দক্ষিণ পাশে সরিয়ে নেওয়া হলে স্থানীয়দের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। কেউ বলছেন, এটি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে ভালো সিদ্ধান্ত, আবার কেউ দাবি করছেন, কিছু ব্যক্তি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে পুরনো জায়গাটি দখল করেছেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্কুলটির নামে মোট ৩৩ শতক জায়গা রয়েছে। আগে এটি ধুনটগামী রাস্তার উত্তর পাশে ছিল। তবে সম্প্রতি এটি দক্ষিণ পাশে স্থানান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য স্থানীয় প্রশাসন পরিদর্শন করেছে।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, বিদ্যালয়টি পূর্বের অবস্থানে থাকলে শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধাজনক হতো। তাদের দাবি, কিছু মহল বিদ্যালয়ের পুরনো স্থান ভরাট করে ব্যক্তিগত ব্যবসার স্বার্থে ব্যবহার করছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. ফিরোজ বলেন, “স্কুল স্থানান্তরের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এটি যথাযথ জায়গায় স্থানান্তরিত হয়নি। জরাজীর্ণ একটি স্থানে বিদ্যালয় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যেখানে রাস্তারও সুবিধা নেই।”
অন্যদিকে, স্থানীয় ফরিদুল, পাইকার সমিতির সদস্য আব্দুল কুদ্দুস ও মুন্নু বলেন, “শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের অসুবিধার কথা চিন্তা করে বিদ্যালয় উত্তর থেকে দক্ষিণ পাশে নেওয়া হয়েছে। পূর্বের তুলনায় নতুন জায়গার পরিমাণ বেশি (২১ শতক)। তাছাড়া, পুরনো জায়গায় মাছের আড়ৎ তৈরি করে সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরেশ চন্দ্র জানান, “বিদ্যালয়টি ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এর নামে ৩৩ শতক জমি রয়েছে। তবে স্থানান্তর নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।”
শেরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, “এখানে দুইটি পক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে। কেউ বলছেন, জায়গা রদবদল হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রদবদলের কোনো সুযোগ নেই। বিদ্যালয়ের জায়গাটি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নামে দান করা হয়েছিল। বর্তমানে স্থানান্তর নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তবে পূর্বের জায়গায় মাটি ভরাটের বিষয়টি আইনি ব্যবস্থার আওতায় আনতে হবে।”
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ’মি) এসএম রেজাউল করিম বলেন, “বিদ্যালয়ের জায়গাটি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। বিষয়টি তদন্তের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক খান বলেন, “বিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা, জমির দখল ও সার্বিক বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এ ধরনের জমি সংক্রান্ত বিতর্ক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে, যা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।”
স্থানীয়দের দাবি, বিদ্যালয়ের আগের জায়গাটি যদি বেহাত হয়ে যায়, তবে এটি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর হবে। তারা আশা করছেন, প্রশাসন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং শিক্ষার পরিবেশ সুরক্ষিত রাখবে।