মাথায় গুলি লেগে ছোট্ট মেয়েটি মুহূর্তেই বাবার কোলে ঢোলে পড়ে। দুপুরে ছাদে খেলতে গিয়েছিল মেয়েটি। এর কিছুক্ষণ পরেই রাস্তায় সংঘর্ষ বাধে। বাসার সামনে হইহল্লা শুনে বাবা ছোট্ট মেয়েটিকে ঘরে আনতে ছুটে যান বাসার ছাদে। কোলে নিতেই একটি বুলেট এসে বিদ্ধ হয় মেয়ের মাথায়। মুহূর্তেই ছোট্ট দেহটি বাবার কোলে ঢলে পড়ে।
রক্তে ভেজা মেয়েকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকেরা বেশিক্ষণ রাখলেন না। পাঠিয়ে দিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। সে রাতেই মেয়েটির মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়।
অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে বলে আশ্বস্ত করেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। মেয়েটিকে রাখা হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। বলা হয়, ৭২ ঘণ্টার আগে কিছুই বলা যাবে না। গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেলে গুলি লাগে মেয়েটির। বুধবার (জুলাই) সকালের দিকে সবাইকে কাঁদিয়ে মেয়েটি চলে যায় না-ফেরার দেশে।
সাড়ে ৬ বছর বয়সী মেয়েটির নাম রিয়া গোপ। মা-বাবার সাথে নারায়ণগঞ্জ সদরের নয়ামাটি এলাকায় ৪ তলা বাড়ির ওপরের তলায় থাকত ওরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের রেশ নারায়ণগঞ্জেও বেশ ছড়িয়ে পড়েছিলো।
গত শুক্রবার বিকালে নয়ামাটি এলাকায় চলছিলো সংঘাত ও গোলাগুলি। আর সেই গুলিতেই প্রাণ গেল ছোট্ট শিশু রিয়ার। ঢামেক হাসপাতালে শিশু রিয়ার মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়, ‘গানশট ইনজুরি’।
দীপক কুমার গোপ ও বিউটি দম্পতির একমাত্র মেয়ে সন্তান ছিলো রিয়া। স্থানীয় একটি রড ও সিমেন্টের দোকানে ব্যবস্থাপকের কাজ করেন দীপক। বিয়ের দীর্ঘ ৫ বছর পর এ দম্পতির ঘর আলো করে আসে কন্যা রিয়া। এ বছরই স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলো সে।
একমাত্র সন্তানকে হারানোর শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন বাবা দীপক কুমার। মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বিড়বিড় করে বলছিলেন, ‘কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল, কিছুই বুঝতে পারি নাই। আমার কোলেই মেয়ের মাথা থেকে রক্ত বেয়ে পড়ছিলো।’ বলে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন দীপক।