বরগুনায় কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণ ও মামলার বাদী তার বাবাকে হত্যার ঘটনায় ওই পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বিকেলে আদালতের নির্দেশে ওই কিশোরীর বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
বুধবার (১৯ মার্চ) বাড়িটির নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন চারজন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তাঁরা ওই পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম পৌরসভার ওই বাড়িতে পুলিশ মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ৪ মার্চ বিকেলে সপ্তম শ্রেণির ওই কিশোরী (১৩) প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিল। পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে সিজিত রায় নামে এক যুবকের নেতৃত্বে কয়েকজন তাকে অপহরণ করে এবং ধর্ষণ করে। পরদিন ৫ মার্চ সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পার্কে তাকে ফেলে রেখে যাওয়া হয়।
এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই কিশোরীর বাবা (৩৭) বরগুনা সদর থানায় সিজিত রায়সহ দুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন। পরদিন স্থানীয় জনতা অভিযুক্ত দুজনকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ সিজিতকে আটক করলেও তাঁর বন্ধুকে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়।
পরে আসামিপক্ষ কিশোরীর পরিবারকে মামলা তুলে নিতে এবং ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দিতে থাকে। এরপর ১১ মার্চ কর্মস্থলে গিয়ে নিখোঁজ হন কিশোরীর বাবা। ওই দিন রাত সোয়া ১২টার দিকে মোবাইল ফোনের রিংটোনের সূত্র ধরে বাড়ির পাশের ঝোপ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামির বাবাসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ।
বরগুনা জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হাইকোর্টের আদেশের পর মঙ্গলবার থেকে ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তায় একজন এএসআইয়ের নেতৃত্বে চারজন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন তিন পালায় বাড়িটির নিরাপত্তা রক্ষা করবে পুলিশ।
মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়, কাঠ-টিনের জরাজীর্ণ ছোট্ট ঘরের সামনে একজন উপপরিদর্শকসহ চারজন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
স্থানীয় মন্দিরের সভাপতি বলেন, ‘মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশ সুপার মহোদয় নিহতের বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করেছেন। আগে আমাদের শঙ্কা থাকলেও হাইকোর্টের এই নির্দেশে আমরা এখন অনেকটাই আশ্বস্ত। এতে এলাকাবাসী সন্তুষ্ট।’
বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল হালিম জানান, মঙ্গলবার বিকেল থেকে পরিবারটির নিরাপত্তার জন্য তিন পালায় ২৪ ঘণ্টা পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘হাইকোর্ট থেকে আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ওই পরিবারের নিরাপত্তার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা লিখিতভাবে বিষয়টি আদালতকে অবহিত করি। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দুপুরে মৌখিক আদেশ পেয়েই ওই বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করেছি।’