নওগাঁয় শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের চাপের মুখে জোর করে পদত্যাগ করানোর পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলা নওগাঁর হাঁপানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মো: নুরুল ইসলামের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ২ দিন চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ২ দিন চিকিৎসার পরেও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি, বরং আরো অবনতির কথা জানান স্বজনরা।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদেরকে পদত্যাগের জন্য চাপের মধ্যে গত বুধবার (২৮ আগস্ট) এই ঘটনা ঘটেছে।
শিক্ষক ও কর্মচারীদের নিয়োগে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে অধ্যক্ষ মো: নুরুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে গত ২৫ অগাস্ট (রবিবার) থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। পরে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে দু’পক্ষের মধ্যে বৈঠকে সমঝোতাও হয়। তবে সেই সমঝোতার পরদিন আবার একদল শিক্ষার্থী অধ্যক্ষের কার্যালয়ে এসে তাকে অবরুদ্ধ করে জোর করে পদত্যাগ করানোর চেষ্টা করে। সেখানে বহিরাগতরাও আসেন, তারা অধ্যক্ষকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।
শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের কটূক্তি ও চাপের মুখে পরে একপর্যায়ে অধ্যক্ষ নুরুল ইসলামকে পদত্যাগপত্রে করতে দেখা যায়। হঠাৎ করেই তিনি বুকে চেপে ধরে লুটিয়ে পড়েন। পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে অধ্যক্ষকে ধরাধরি করে সেখান থেকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বিকেল ৪টায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ২ দিন চিকিৎসার পর শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সকালে অধ্যক্ষকে ঢাকায় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। এই প্রতিবেদন লেখার সময় স্বজনরা তাকে নিয়ে ঢাকার পথে আছেন।
নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক কাকলী হক জনিয়েছেন, বুধবার বিকালের দিকে জ্ঞান হারানো অবস্থায় এক শিক্ষককে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উনার জ্ঞান ফেরে। আমরা ধারণা করেছিলাম ওই শিক্ষক স্ট্রোক করেছেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই শিক্ষকে রাজশাহীতে নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
অধ্যক্ষ নুরুলের ভাই আবু নাছের আহম্মেদ জানান, পদত্যাগের দাবিতে গত রবিবার থেকে তার প্রতিষ্ঠানের একদল শিক্ষার্থী ও বহিরাগত লোকজন আন্দোলন করছিলো। এ নিয়ে মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম রবীন শিষ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও সকল শিক্ষকদের নিয়ে সভা করেন এবং উভয়পক্ষের মধ্যে মীমাংসাও করে দেন। পরদিন বুধবার সকালে নুরুল ইসলাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেলে একদল শিক্ষার্থী তাকে বিগত সময়ের কিছু হিসাব-নিকাশ বুঝিয়ে দিতে বলে।
নুরুল হিসাব-নিকাশ বুঝিয়ে দেওয়ার একপর্যায়ে দুপুর ২টার দিকে বহিরাগত বেশ কিছু লোকজন তার কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও শরীরে হাত দিয়ে টানা-হেঁচড়া করতে থাকে। এভাবে ঘণ্টাখানেক চলার পর অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সে স্বাভাবিক অবস্থায় নেই, যা কথা বলছে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না, ভেঙে ভেঙে বলছে। অবস্থা ভালো না তাই ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছে।
নওগাঁ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও হাঁপানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এস এম মো: রবীন শিষ তাদের মধ্যে সমঝোতার কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বশে কয়েক দিন ধরেই অধ্যক্ষ নূরুল ইসলামকে নিয়ে একটা অস্থিরতা চলছিলো। গত মঙ্গলবার উভয়পক্ষের সাথে আমি আলোচনা সভাও করেছি, সমঝোতার মধ্যে দিয়ে সভাটি শেষ হয়। কিন্তু রবিবার আবারো এ নিয়ে অস্থিরতা দেখা দেয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখলে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ইউএনও জানান, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলমান অস্থিরতা বন্ধ করার জন্য গত বৃহস্পতিবার বিকালে একটি সভা করেছি। যেখানে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ ধরনের অস্থিরতা এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।