পাবনার সুজানগরে মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে ২টি মন্দিরে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ও মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) রাতে এ ঘটনা ঘটেছে। এতে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে দুর্গাপূজা উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তারা নিজেদের নিরাপত্তা এবং সুষ্ঠুভাবে পূজা উদ্যাপন করার জন্য প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এই ঘটনার পর সুজানগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: সাকিউল আজমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। র্যাব, সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সেই সাথে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদ্যাপনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, “আগামী ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হবে। এখন প্রতিটি মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। এখন শুধু রঙের কাজ বাকি আছে। এর মধ্যে গত শনিবার গভীর রাতে সুজানগর পৌর এলাকার ঋষিপাড়া বারোয়ারি পূজামণ্ডপে তৈরি করা দুর্গা প্রতিমাসহ ৪টি প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। সকালে স্থানীয় লোকজন মন্দিরে গিয়ে বিষয়টি দেখতে পান।
এরপর গত মঙ্গলবার রাতের আধারে একই এলাকার মানিকদী পালপাড়া বারোয়ারি পূজামণ্ডপে দুর্গা প্রতিমাসহ ৫টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। রাতের অন্ধকারে এভাবে প্রতিমা ভাঙচুর হওয়ায় পূজা উদ্যাপন নিয়ে তাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি থানায় জানানো হলে র্যাব, সেনাবাহিনী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করেন। তারা ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিমা আবারো মেরামতের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা আশা করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের পাশে থাকবেন।”
অপরদিকে পরপর ২টি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছেন পুলিশ প্রশাসন। এ ঘটনায় সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: সাকিউল আজমকে যোগদানের মাত্র ১৫ দিনের মাথায় প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি উপজেলার কামালপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো: গোলাম মোস্তফাকে সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পাবনার সুজানগরে ২টি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসপি) মো: কাজী শাহ নেওয়াজ জানিয়েছেন, মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের খবর শুনে প্রত্যেকটি এলাকায় গিয়ে পরিদর্শন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহলসহ সব ধরনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিমা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তারে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ওসি প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এটাকে প্রত্যাহার বলছি না। জনস্বার্থে তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: রাশেদুজ্জামান জানিয়েছেন, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আইনগত ব্যবস্থা নিতে ঘটনার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। সেই সাথে প্রতিটি মন্দিরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে স্থানীয় জনগণের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করছি সব এলাকায় সুষ্ঠু এবং সুন্দরভাবে দুর্গাপূজা উদ্যাপিত হবে।