‘শিরক ও বিদআতের উৎসস্থল’ বলে ঘোষণা দিয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের আলম মীরের কান্দি গ্রামে প্রায় দুই শতকের পুরোনো একটি বটগাছ কেটে ফেলেছেন স্থানীয় একদল আলেম।
গাছ কাটার দৃশ্য ধারণ করা ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যায়, করাত দিয়ে গাছ কাটছেন কয়েকজন, আরেক ব্যক্তি ঘোষণা দিচ্ছেন—‘শিরকের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইনশাআল্লাহ’।
স্থানীয়রা জানান, গাছটির নিচে দীর্ঘদিন ধরে কিছু মানুষ মোমবাতি জ্বালিয়ে মানত করতেন। অনেকের বিশ্বাস ছিল, গাছটির অলৌকিক শক্তি রয়েছে। এ কারণেই একদল ধর্মীয় ব্যক্তি এটিকে শিরক মনে করে গাছটি কেটে ফেলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (৫ মে) সকাল ৯টার দিকে গাছটি কাটার কাজ শুরু হয়। প্রথমে ডালপালা এবং পরে মূল কাণ্ডের প্রায় ৭৫ শতাংশ কেটে ফেলা হয়। পরদিন মঙ্গলবার একটি ১৪ সেকেন্ডের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আজম খান। তিনি বলেন, “গাছের নিচে কিছু মানুষ ধর্মীয় আচার পালন করত। ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টি বিদআত হওয়ায় আলেমরা গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন। অনেক গ্রাম থেকেই লোক এসেছিল।”
১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আলেমদের উদ্যোগেই গাছটি কাটা হয়েছে। তবে কারা নেতৃত্বে ছিলেন তা এখনো জানি না। স্থানীয় অনেকেই এতে আপত্তি করলেও প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলছেন না।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুর সদর উপজেলার ইউএনও ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, “বিষয়টি আমি সোমবার রাতে জেনেছি। কারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের ডাকা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর বিস্তারিত বলা যাবে।”
পুরোনো ঐতিহ্য আর ধর্মীয় ব্যাখ্যার দ্বন্দ্বে কাটা পড়া ২০০ বছরের গাছটির স্থান এখন শুধুই স্মৃতি। ভিডিওটি ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, অনেকে একে ইতিহাস মুছে ফেলা বলেও মন্তব্য করছেন।