সারা বিশ্বের ন্যায় বগুড়ার শেরপুরেও শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের মহাস্নানযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। শেরপুর পৌর শহরের উত্তর সাহাপাড়ায় ইসকন মন্দিরে এই ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের মহাস্নানযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসব ঘিরে সকাল থেকেই মন্দির চত্বর মুখর ছিল মঙ্গলারতি, পূজা অর্চনা ও শত শত ভক্তের পদচারণায়। ভক্তি-আস্থায় স্নানমঞ্চ পরিণত হয় এক অভূতপূর্ব আধ্যাত্মিক মিলনমেলায়।
উৎসবের মূল আয়োজন শুরু হয় সকাল ১১টায়। এরপর সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠিত হয় মহা অভিষেক। এ সময় শ্রী জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহ মূর্তিগুলোকে মন্দির থেকে বাইরে এনে স্নানবেদীতে স্থাপন করা হয়। পাশে থাকা সোনার কুয়ো থেকে তোলা ১০৮ ঘড়া পবিত্র জল দিয়ে গন্ধ দ্রব্য ও ভেষজ উপাদানে মিশ্রিত ঐতিহ্যবাহী স্নান সম্পন্ন করেন পুরোহিতেরা। চলে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ।

এই জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমার দিনটিকেই প্রভু জগন্নাথদেবের আবির্ভাব তিথি হিসেবে মানা হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, এই দিনে জগন্নাথ স্বরূপ আত্মপ্রকাশ করেছিলেন পৃথিবীতে। তাই দিনটি স্নানযাত্রার পাশাপাশি আবির্ভাব তিথি হিসেবেও উদযাপিত হয়।
পৌরাণিক মতে, রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন কর্তৃক দারুমূর্তি স্থাপনের পর থেকেই জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা মহোৎসবের সূচনা হয়। এই স্নান পর্বের পর দেবতারা ‘অনাবরণ’ বা লোকচক্ষুর আড়ালে রাজবৈদ্যদের চিকিৎসাধীন থাকেন বলে বিশ্বাস করা হয়। এসময় তাঁদের জ্বর আসে। স্নান শেষে গজবেশ ও শোভামণ্ডিত বেশে দেবতারা আবারও প্রকাশ্যে আসেন।
পুরাণ অনুযায়ী, এই স্নানযাত্রা শুধু একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি জীবের জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্তির পথ। স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে, জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমায় শ্রীহরির স্নানযাত্রা দর্শন করলে হাজার তীর্থে স্নানের থেকেও অধিক পুণ্যফল লাভ হয়। মহর্ষি জৈমিনির বর্ণনায়, এ দর্শন পাপমোচনের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক তৃপ্তিও এনে দেয়।
সকাল থেকে অনুষ্ঠানটি দেখতে ভক্তদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা যায়। অনেকেই আনন্দ, ভক্তি ও শ্রদ্ধা নিয়ে অংশ নেন কীর্তন, প্রসাদ বিতরণ ও সেবা কার্যক্রমে।
শেরপুর ইসকন মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক অচ্যুত দাস ব্রহ্মচারী বলেন, “সারা বিশ্বের মতো শেরপুরেও আমরা প্রতি বছর এই পবিত্র স্নানযাত্রা মহোৎসব উদযাপন করে থাকি। এটি শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, ভক্তির গভীর প্রকাশ ও আত্মশুদ্ধির এক বিরল সুযোগ। আজকের দিনে ভগবান জগন্নাথের স্নানদর্শনের মাধ্যমে হাজার তীর্থের ফল পাওয়া যায়, এমনটাই আমাদের শাস্ত্রে উল্লেখ আছে।