উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় বাঙালি নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে ৫টি গ্রামসহ ৩০০ বিঘা ফসলি জমি ও বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে রয়েছে বরিতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নোয়াবাড়ি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরিতলী জামে মসজিদ, নুরানি মাদ্রাসা, কবরস্থান ও মক্তব। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ৮ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি।
সরেজমিনে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের ভাঙন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বরিতলী গ্রামের প্রায় ৩০০ মিটার ও বিলনোথার গ্রামের প্রায় ৪০০ মিটার এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। গত ১৫ জুলাই থেকে নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে ওই এলাকার অন্তত ১২০ বিঘা ফসলি জমি। হুমকির মুখে আছে বরিতলী, বিলনোথার, নবীনগর, শইলমারি ও শান্তিনগর গ্রামের ৮ হাজার পরিবার। এই এলাকা জুড়ে বাঙালি নদীর ভাঙন আতঙ্কে অনেকেই বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। প্রতিবছর নদীভাঙন রোধে নেওয়া কোনো ব্যবস্থাই কাজে আসছে না। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, ভাঙন অব্যাহত থাকলে আরও অনেক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
বরিতলী গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন বলেন, বাবাসহ আমি ৭ বার এই বাঙালি নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছি। একটা পরিবার যদি ৭ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়, তাহলে তার আর কী থাকে?’ তিনি দুঃখ প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘গত বছরেও বর্ষার সময় বাড়ির পাশের ৫ বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। এখন দেখছি, আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই এই বাড়িটিও চলে যাবে।’
বিলনোথার গ্রামের বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, ‘একসময়ে আমার বাপ-দাদার অনেক জমি ছিল। আজ আমরা জমিহারা। এই বাঙালি নদী আমাদের সেই রাজত্ব ধ্বংস করে ফকির বানিয়ে দিয়েছে। বাঙালি নদীর উপর্যুপরি ভাঙনের পর ভিটেমাটি হারিয়ে আমার আপন ভাই এখন ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করেন। ভিটেমাটি হারানোর দুঃখে তিনি আর এলাকাতে বেড়াতেও আসেন না।’
শইলমারি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ আবুল ফজল বলেন, ‘১৯৮৮ সালের পর থেকে আমি দেখেছি, এই বাঙালির ভয়াবহতা। আমার নানার অনেক জমি ছিল। সব জমি ভেঙে গেছে। মায়ের কাছে শোনা, নানার বাড়ি ১২ বার ভেঙেছে। আমার ভিটেবাড়ি সরিয়েছি সাতবার। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, এ এলাকার বাঙালি নদীর ভাঙন প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হোক।’
২০২৪ সালে বাঙালি নদীর বরিতলী পয়েন্টে নদীভাঙন শুরু হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করে ১৫ হাজার জিও ব্যাগ দিয়ে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে দেয়। তবে প্রতিনিয়ত নদীভাঙনের মুখে কাজে আসছে না সেই বাঁধও। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া নেওয়ার দাবি জানান স্থানীয়রা ।
এ বিষয়ে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, ‘বগুড়ার শেরপুর উপজেলাধীন বরিতলী গ্রামে বাঙালি নদীর ডান তীরের বেশ কিছু এলাকায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তরফ থেকে ভাঙনস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। পরিদর্শন শেষে দেখা গেছে, এই দেড়শ মিটার কাজ বাস্তবায়ন করতে ৫০ লাখ টাকার মতো ব্যয় হবে। এর প্রতিবেদন আমরা প্রস্তুত করেছি। শিগগিরই কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠাব। বরাদ্দ পেলে দ্রুতই কাজ শুরু করব।’
গত সপ্তাহে এ উপজেলায় ভোর থেকে সারা দিন ভারী বর্ষণের ফলে ভাঙন আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে