বগুড়ার শেরপুর উপজেলার দুগ্ধ ও গবাদিপশু উন্নয়ন খামারে অনুষ্ঠিত শিডিউলের মাধ্যমে সীমিত পরিসরে দরপত্র ভিত্তিক গরুর নিলামের বিষয়ে স্বচ্ছতা ও নিয়ম মানা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অংশগ্রহণকারীরা। অভিযোগ উঠেছে, নিলামের আগে গরুর সরকারি ভিত্তিমূল্য প্রকাশ না করায় প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নষ্ট হয়েছে এবং গোপনীয়তার সুযোগে অনিয়ম ঘটেছে বলে দাবি তাদের।
জানা গেছে, গত ২১ মে খামারে ৮৮টি গরু, ৪০টি গাভী, ৪৩টি ষাঁড় ও ৫টি বকনা সীমিত পরিসরে দরপত্রের মাধ্যমে নিলামে তোলা হয়। খামার কর্তৃপক্ষ মোট ৮৭টি শিডিউল বিক্রি করলেও জমা পড়ে মাত্র ৪২টি। এতে ২৫ জন সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হন। নিলামে সর্বমোট দর ওঠে ৫৭ লাখ ৪১ হাজার ৩৪৭ টাকা। প্রতি শিডিউলের মূল্য নির্ধারিত ছিল ৭৫০ টাকা।
নিলাম সংক্রান্ত কার্যক্রম তদারকির জন্য ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে ছিলেন জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনিছুর রহমান, কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের উপপরিচালক ডা. জহুরুল ইসলাম, উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নিয়ায কাজমীর রহমান, ভেড়া উন্নয়ন খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক ডা. শাহিনুর রহমান, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মমতা হক এবং খামারের উপপরিচালক (অতিরিক্ত) ডা. মো. সাইফুল ইসলাম।
নিলামে অংশগ্রহণকারী মো. ফেরদৌস ইসলাম বলেন, “আমি দুটি গরুর (বিডি-৮৬ ও বিডি-১৯৩৪) সর্বোচ্চ দরদাতা ছিলাম। নামও ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু পরে আমাকে না জানিয়ে অন্য একজনকে গরুগুলো দেওয়া হয়। কোনো লিখিত ব্যাখ্যাও পাইনি।” একই অভিযোগ করেন দরদাতা মো. শহিদুল ইসলাম।
নিলামের দিন শেষে খামারের দেয়ালে সর্বোচ্চ দরদাতাদের নাম তালিকাভুক্ত করে টানানো হলেও, পরদিন দেখা যায় তালিকাটি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন বলেন, “সরকারি ভিত্তিমূল্য প্রকাশ না করায় কেউ বেশি দর দিয়েছে, কেউ আবার অংশ নিতে সাহস করেনি। এতে প্রতিযোগিতা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আবার গরু পাওয়ার পরেও অনেকেই গরু নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন।”

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ২০১৫ সালের “খামারসমূহ হতে গবাদিপশু-পাখি ও সম্পদ নিলাম বিক্রয় নির্দেশিকা” অনুযায়ী, নিলামের পূর্বে গরুর ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করে তা অফিস নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক। অথচ এই নিলামে সেটি মানা হয়নি বলে অভিযোগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট খামারের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপপরিচালক ডা. মো: সাইফুল ইসলাম ভিত্তিমূল্য প্রকাশের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো জবাব দিতে পারেননি। দরদাতাদের নাম ঘোষণা নিয়ে বিভ্রান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা উভয়ের সাথে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করে নিয়েছি।”
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনিছুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, “নিলামের ফলাফল প্রকাশের সময় একাধিক শিট ব্যবহারের কারণে ভুলবশত পাঁচটি গরুর ক্ষেত্রে কম দরদাতার নাম প্রকাশ করা হয়েছিল। বিষয়টি পরে সংশোধন করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “নীতিমালায় উন্মুক্ত নিলামের ক্ষেত্রে ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ প্রযোজ্য। তবে সেটি প্রকাশ করা হয়েছিল কি না, তা আমি নিশ্চিত নই।”