সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া দাবি করেছেন, ২০১৪ সালের বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে ছয় মাসের মধ্যে আরেকটি নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
সম্প্রতি ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে তার ভূমিকা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন, তার দায়িত্ব ছিল সংবিধান অনুসারে কাজ করা, এবং কোনো পক্ষের রাজনৈতিক স্বার্থে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার না করা।
২০০৬-২০০৮: রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সেনা সমর্থিত সরকার
ইকবাল করিম ভুঁইয়া উল্লেখ করেন, ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপির শাসনামলে প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়িয়ে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার চেষ্টা করা হয়। তবে ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর বিএনপির প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কায় আওয়ামী লীগ ‘লগি-বৈঠার আন্দোলন’ শুরু করে, যা ব্যাপক সহিংসতায় রূপ নেয়।
আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বিচারপতি কে এম হাসানকে মেনে নিতে রাজি হয়নি। পরে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদ দায়িত্ব নেন, কিন্তু রাজনৈতিক সংকট সামাল দিতে ব্যর্থ হন। তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের চাপে তিনি ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় এবং ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি তারা ক্ষমতা গ্রহণ করে। বিএনপি এ নির্বাচনকে কারসাজিপূর্ণ বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
২০১৪ সালের নির্বাচন ও গোপন সমঝোতা
সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে, যার ফলে বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে। এতে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হন।
তিনি দাবি করেন, পশ্চিমা কূটনৈতিক চাপের মুখে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে ছয় মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচনের একটি সমঝোতা হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি।
সেনাবাহিনীর ভূমিকা ও ব্যক্তিগত অবস্থান
ইকবাল করিম ভুঁইয়া বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন প্রতিরোধে বা পরিচালনায় সেনাবাহিনী ব্যবহার করা হয়নি। এরপরও বিএনপি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার অভিযোগ তোলে, তবে তার কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ দিতে পারেনি।
তিনি বলেন, ২০০৭ সালে সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ ও তার সহযোগীরা যে ধরনের ভূমিকা নিয়েছিলেন, তিনি তেমন কিছু করতে রাজি ছিলেন না। কারণ তার ও সেনাবাহিনীর দায়িত্ব ছিল সংবিধান মেনে চলা। রাজনৈতিক সংকট সমাধান করা সেনাবাহিনীর কাজ নয়, এটি রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব।
তিনি আত্মপ্রত্যয়ীভাবে বলেন, “আমি স্বস্তি পেয়েছিলাম এই ভেবে যে, নির্বাচনকে ঘিরে যে বিতর্ক, বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, সেখান থেকে সেনাবাহিনীকে দূরে রাখতে পেরেছি। আমি মনে করি, নির্বাচনের মতো অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর কখনোই জড়িত হওয়া উচিত নয়।”