স্বাস্থ্যসেবায় শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রথম স্থান অর্জন করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ (এইচএসএস) রেটিংসে সারা দেশে প্রথম স্থান অর্জন করেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৯.৪৪ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রথম স্থান দখল করে নিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর সারা দেশে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে বিভিন্ন ইনডিকেটর বা পরিমাপক দ্বারা পর্যালোচনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ (এইচএসএস) রেটিংসে স্কোরের মাধ্যমে র্যাঙ্কিং করে থাকে। প্রতি মাসে এই র্যাংঙ্কিং করা হয়। সর্বশেষ র্যাংঙ্কিংয়ে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এর আগে জানুয়ারী মাসে এর অবস্থান ছিলো দ্বিতীয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল এই স্বাস্থ্য কমপেক্সেকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নিত করা হয়। তবে জনবলের অভাবে ৩১ শয্যা চালু আছে। একই সময় অত্যাধুনিক ২০ শয্যা বিশিষ্ট চারতলা ভবনের ট্রমা সেন্টারে উদ্বোধন করা হয়।
এখানে ১ জন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা, ৮ জন মেডিকেল অফিসার, ১ জন হারবাল মেডিকেল অফিসার, ৩ জন কনসালটেন্ট, ৩২ জন নার্স ও মিডওয়াইফ এবং ১১ জন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার কর্মরত আছেন। এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৯৫০ জন মানুষ বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে থাকেন।
আরো জানা যায়, এখানে বিভিন্ন প্রচারণার মাধ্যমে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে নারীদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ফলে এলাকায় স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় ৩৬ বছর পর গত ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারী শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় ২টি প্রিঅপারেটিভ বেড, ৩টি পোস্ট-অপারেটিভ বেডসহ কয়েকটি কক্ষ নিয়ে অস্ত্রোপচার ইউনিট চালু করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে অস্ত্রোপচার কক্ষের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে। অস্ত্রোপচার ইউনিটে একজন গাইনি অবস, একজন শল্য চিকিৎসক, একজন অ্যানেস্থেটিস্ট, একজন শিশু ডাক্তার নিয়োজিত আছেন। এ ছাড়াও ইউনিটে রয়েছে একাধিক সহকারী ডাক্তার, নার্স ও ওয়ার্ডবয়। অপারেশন থিয়েটারে ১টি কার্ডিয়াক মনিটর, ২টি অটোক্লাভ মেশিন, ২টি ড্রাই এয়ার ওভেন, ১টি সাকার মেশিন, ১টি রুম হিটার, ১টি নেবুলাইজার মেশিন, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ডাইয়া থার্মি মেশিন ও অ্যানেস্থেশিয়া মেশিন আছে।
সেই সাথে অত্যাধুনিক ডিজিটাল এক্সরে মেশিন চালুর পাশাপাশি হাসপাতালে প্যাথলোজির সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা, যক্ষা রোগীদের জিন এক্সপার্ট পরীক্ষা, ইসিজি, এএনসি ও পিএনসি সেবা, সুসজ্জিত ডেন্টাল সার্ভিস, কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা, টেলিমেডিসিন চিকিৎসাসেবা, হারবাল চিকিৎসাসেবা, ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেশার রোগীদের জন্য এনসিডি কর্নার, শিশুদের জন্য আইএমসিআই কর্নার ও কে এম সি কর্নারসহ অন্য সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা চালু রয়েছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
সেইসাথে হাসপাতালের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বিভিন্ন প্রজাতির সভাবর্ধক ও ফলজ গাছের মাধ্যমে মনোরম ছাদবাগান তৈরী করা হয়েছে, ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য পুষ্টি বাগানসহ তৈরী করা হয়েছে বিভিন্ন ধরণের ফলজ বৃক্ষের বাগান। রোগী ও তাঁদের অ্যাটেন্ডেণ্টদের খাবারের জন্য আছে ডাইনিং রুমের ব্যাবস্থা আছে সুন্দর গ্যারেজের ব্যবস্থা।
অত্র উপজেলাসহ আশপাশের প্রায় ৬-৭টি উপজেলার মানুষ আগে দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে বগুড়া থেকে জলাতঙ্ক এর ভ্যাকসিন নিয়ে আসত, তাঁদের জন্য ২০২১ সাল থেকে অত্র হাসপাতালে জলাতঙ্ক এর ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা হয়।
আগে এই হাসপাতাল থেকে দৈনিক গড়ে ২০০-২৫০জন রোগী স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতেন আর বর্তমানে পরিবেশ ও সেবার মান উন্নয়নের ফলে দৈনিক গড়ে প্রায় ৯০০-১০০০জন মানুষ তাঁদের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করে থাকেন।
স্বাস্থ্যসেবায় শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রথম স্থান অর্জনের বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: লিংকন বলেন, আমরা উপজেলার প্রায় ৫ লক্ষ জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নিরলস কাজ করছি। আমাদের দেশসেরা হওয়ার এ অর্জন এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পরিশ্রমের ফসল। আমরা প্রতিটি মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চাই।