জন্ম থেকেই নেই হাত-পা, কিন্তু তাতে কি? স্বপ্নের সঙ্গে আপোষ না করা এক অসম্ভবকে সম্ভব করে চলেছেন লিতুন জিরা। যশোরের মণিরামপুর উপজেলার এই কিশোরী এখন মুখে কলম ধরে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন, আর নিজের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়েই লিখছেন সাহসিকতার গল্প।
সাতনল খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান ও জাহানারা বেগম দম্পতির কন্যা জিরা জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। কিন্তু জীবনের প্রতিটি ধাপে তিনি প্রমাণ করে চলেছেন—শারীরিক সীমাবদ্ধতা নয়, ইচ্ছাশক্তিই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন জিরা। পরীক্ষা দিচ্ছেন উপজেলার নেহালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে, যেখানে মুখে কলম ধরে বিশেষ কৌশলে প্রতিটি উত্তরের কাগজ ভরিয়ে তুলছেন তিনি।
একটির পর একটি অর্জন, সাফল্যের মালা গাঁথা। লিতুন জিরা শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, পাঠ্যবহির্ভূত ক্ষেত্রেও রেখেছেন দুর্দান্ত কৃতিত্বের স্বাক্ষর।
প্রাথমিক সমাপনীতে বৃত্তি অর্জন এর্ব পরপর দুই বছর (২০২৩ ও ২০২৪) উপজেলা মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন লিতুন জিরা।
২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ের চ্যাম্পিয়ন একই বছর জাতীয় শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতায় গোল্ড মেডেল এই সব কিছুই তিনি অর্জন করেছেন একাগ্রতা, নিষ্ঠা আর অবিশ্বাস্য মানসিক শক্তির বলে।
মা জাহানারা বেগম বলেন, “জন্মের পর মেয়ের ভবিষ্যৎ ভেবে কত রাত কাঁদেছি। কিন্তু আজ সে প্রতিটি পদক্ষেপে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করছে।”
বাবা হাবিবুর রহমান, একজন কলেজ শিক্ষক, বলেন,“ছোটবেলায় হুইলচেয়ারে বসিয়ে স্কুলে নিয়ে যেতাম। আজ সে একা নিজেকে এগিয়ে নিচ্ছে। এটা দেখেই গর্বে বুক ভরে যায়।”
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না বলেন,“জিরার মতো শিশু সমাজে এক একটি মিরাকল। তার মেধা ও মানসিক শক্তি দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ।”
লিতুন জিরা শুধু একজন পরীক্ষার্থী নন, তিনি চলার পথে আলো জ্বালিয়ে দেওয়া এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা। যারা স্বপ্ন দেখতে ভয় পায়, তাদের জন্য জিরা যেন এক নিরব প্রতিবাদ—যে বলে, “শরীর নয়, মন বড় কথা। পথ কঠিন হলেও থামা যাবে না।”