শেখ হাসিনার দোসররা ‘ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব’ পুড়িয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে বর্ষবরণ শোভাযাত্রার প্রস্তুতির মধ্যে ঘটে গেল এক বিতর্কিত ঘটনা। শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোররাতে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় একটি প্রতীকী শিল্পকর্ম—যা বলা হচ্ছে ছিল ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মুখাবয়ব’।
ঘটনাটি বর্ষবরণ উৎসবের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তৈরি করা মোটিফে আগুন লাগানোর মাধ্যমে সংঘটিত হয়। এতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মহলে। অনেকেই ঘটনাটিকে একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। দাবি উঠেছে, এই আগুন কেবল একটি শিল্পকর্ম নয়, বরং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর একটি আঘাত।
ঘটনার পরপরই ফেসবুকে কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নির্মাতা ও সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
তিনি লিখেছেন, “হাসিনার দোসররা গতকাল ভোর রাতে চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়ে দিয়েছে। এই দুঃসাহস যারা দেখিয়েছে—সফট আওয়ামী লীগ হোক বা আওয়ামী বি-টিম হোক—তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনতে হবে, দ্রুত।”
উপদেষ্টা ফারুকী তার স্ট্যাটাসে আরও লেখেন, এই শোভাযাত্রা থামাতে যারা কাজ করছে, তাদের শুধু বিচারের মুখোমুখি করাই নয়, বরং এবারের শোভাযাত্রাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে রূপ দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “হাসিনার দোসররা জানিয়ে দিয়ে গেলো—বাংলাদেশের মানুষ এক হয়ে উৎসব করুক তারা এটা চায় না। আমরা এখন আরও বেশি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, এবং আরও বড় পরিসরে অংশ নেবো।”
ফারুকীর দাবি অনুযায়ী, সম্প্রতি জুলাই আন্দোলনের অনেকেই মত দিয়েছেন, এবারের শোভাযাত্রা হচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক আয়োজন, যেখানে বিভিন্ন মত ও কণ্ঠের সমবায় ঘটছে। এই ঘটনার পর তিনি মনে করেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ আরও বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে।
“এই দানবের উপস্থিতি এখন আরো অবশ্যাম্ভাবী হয়ে উঠলো বলে জানান তিনি।
শিল্পকর্মে আগুন লাগার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি উঠেছে সর্বমহলে। কে বা কারা এই আগুন দিয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য কী—তা স্পষ্ট না হলেও, পুরো ঘটনায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রমাণিত হচ্ছে বলে মত অনেকের।
চারুকলার শিক্ষার্থীরা এই ঘটনায় হতবাক ও ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, এটি শুধু একটি শিল্পকর্ম নয়, বরং মুক্তচিন্তা ও প্রতিবাদের রূপ।
বর্ষবরণ উৎসব শুধুই বর্ণিল সাজের আয়োজন নয়—এটি প্রতিবাদেরও ভাষা। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ যদি আগুনে পুড়েই যায়, তবে প্রশ্ন উঠে পড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক চেতনা নিয়েও।