সিলেটে বকেয়া মজুরি ও রেশনসহ ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে চা-শ্রমিকেরা।
সোমবার (২৪ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ‘চা–শ্রমিক ও চা–বাগান রক্ষা কমিটি’র ব্যানারে লাক্কাতুরা চা-বাগান থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি নগরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে বেলা দেড়টার দিকে শতাধিক শ্রমিক সিলেট জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
চা-শ্রমিকদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, বকেয়া মজুরি পরিশোধ, বাগান সরদারদের মাসিক বেতন প্রদান, শ্রমিকদের সাপ্তাহিক রেশন নিশ্চিতকরণ, বাগানের মাসিক বেতনপ্রাপ্ত শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ, কর্তনকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড (PF) টাকা যথাযথভাবে জমা প্রদান, শ্রমিকদের চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ।
দাবিগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে, নিয়মিত বসতবাড়ি নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় উপকরণ (টিন, কাঠ, দরজা, জানালা) প্রদান, বকেয়া বোনাস ও এরিয়া বকেয়া টাকা পরিশোধ, শ্রমিকদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের ফান্ডের টাকা দ্রুত পরিশোধ করা।
চা-বাগানের শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, তারা টানা ১৩ সপ্তাহ ধরে মজুরি ও রেশন পাচ্ছেন না। সিলেটের বুরজান চা-বাগান, বুরজান চা কারখানা, ছড়াগাং চা-বাগান ও কালাগুল চা-বাগানের শতাধিক শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বেতন-ভাতা না পেয়ে শ্রমিকদের পরিবারে অনাহারের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শিশুরা তিন বেলা খাবার পাচ্ছে না, পড়াশোনা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
বিক্ষোভ শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে চা-শ্রমিকদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাশেম।
চা-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ‘চা-শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালি’র সভাপতি রাজু গোয়ালা, সাধারণ সম্পাদক দেবু বাউরি এবং মালনীছড়া চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি জিতেন সমর।
বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, শ্রমিকদের দাবি অবিলম্বে পূরণ না হলে তারা একযোগে কর্মবিরতিতে যাবেন, যার সম্পূর্ণ দায়ভার বাগান কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও রেশন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
চা-শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের বকেয়া পাওনা ও দুর্দশার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ এখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। শ্রমিকদের এই ন্যায্য দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা না হলে দেশের অন্যতম বৃহৎ চা-শিল্পে অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শ্রমিকদের আন্দোলন কি তাদের দাবি আদায়ে সফল হবে, নাকি আবারও আশ্বাসের বৃত্তে ঘুরপাক খাবে? সেটিই এখন দেখার বিষয়।