রাজধানীর বাজারে মুরগি-ডিম ও গরুর মাংসের দাম বেড়েছে হঠাৎ করে। বিশেষ করে দেশি মুরগি ও লাল লেয়ারের দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়লেও ব্রয়লার মুরগির দাম আগের মতোই রয়েছে। অন্যদিকে গরুর মাংসেও কেজিতে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায়।
শুক্রবার (১৬ মে) কেরানীগঞ্জের আগানগর, নয়াবাজার, হাতিরপুল ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, তীব্র গরমের কারণে খামারগুলোতে প্রচুর মুরগি মারা যাচ্ছে। এতে বাজারে সরবরাহ কমে গেছে, ফলে দাম বাড়ছে। কেরানীগঞ্জের মুরগি বিক্রেতা স্বপন বলেন, “খামারে প্রতিদিন অনেক মুরগি মারা যাচ্ছে। সরবরাহ কম থাকায় আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।”
সোনালি মুরগি এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৭০-২৮০ টাকায়, যেখানে এক সপ্তাহ আগেও এটি ছিল ২৫০ টাকার মধ্যে। দেশি মুরগির কেজি ৬৫০-৭০০ টাকা, লাল লেয়ার ৩০০ টাকা এবং সাদা লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। হাঁসের দাম পিসপ্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।
শুধু মুরগি নয়, ডিমের দামেও আগুন লেগেছে। লাল ডিম ডজনে ১৩০-১৪০ টাকা, সাদা ডিম ১২০-১২৫ টাকা, হাঁসের ডিম ১৮০-২০০ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিম ডজনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। পাড়ার দোকানগুলোতে এসব ডিম আরও ৫-১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, তীব্র গরমে ডিম দ্রুত নষ্ট হচ্ছে, তাই চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণেই দাম বাড়ছে।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) জানিয়েছে, হিট স্ট্রোকে প্রতিদিন হাজার হাজার মুরগি মারা যাচ্ছে। এতে প্রান্তিক খামারিদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দিনে গড়ে ৫০ হাজার টাকা করে দাঁড়াচ্ছে। সব মিলিয়ে গত এক মাসে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
বিপিএর সভাপতি জানান, অনেক খামার ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। সামনের দিনে ডিমের উৎপাদন ৫% ও মাংস উৎপাদন ১০-১৫% কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে, যা দেশের খাদ্যনিরাপত্তায় বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
একই অবস্থা গরুর মাংসের বাজারেও। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে খামারিরা গরু কম বিক্রি করছেন। ফলে বাজারে সরবরাহ কমে গিয়ে দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আগানগর বাজারের মাংস বিক্রেতা হামিদুল বলেন, “ঈদের আগে খামারিরা গরু কম ছাড়ে, তাই এখন দাম একটু বাড়ে। এটা প্রতিবছরই হয়।”
গরুর মাংস বর্তমানে কেজি ৭৮০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খাসি ও ছাগলের মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে—প্রতি কেজি খাসির মাংস ১২০০ টাকা, ছাগলের মাংস ১১০০ টাকা।
বাজারে এক ব্যবসায়ী বলেন, “যে কয়টা গরু বাজারে আছে, সেগুলোও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে আমরা বাধ্য হয়েই দাম একটু বাড়িয়ে বিক্রি করছি। তবে ঈদের পর বাজার আবার স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।”