বিনিময় প্রথার স্মৃতিচিহ্ন আর লোকজ সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি, এটাই কুলিনকুন্ডা শুঁটকি মেলা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুলিনকুন্ডা গ্রামে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আয়োজিত হয় শতবর্ষের পুরনো এই ঐতিহ্যবাহী মেলা। এখানে নেই আধুনিকতার ঝলক, আছে শেকড়ের টান আর মানুষের মাটির সঙ্গে গভীর সম্পর্ক।
৩০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যের ধারক এই মেলায় এখনও টিকে আছে পণ্য বিনিময়ের নিদর্শন। যদিও তা আগের মতো বর্ণাঢ্য নয়, তবুও প্রতীকি রূপে এই সংস্কৃতিকে ধরে রাখার প্রয়াস আছে স্থানীয়দের মধ্যে।
এবারের মেলায় অন্যান্য বছরের তুলনায় শুঁটকি ও ক্রেতার সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। মঙ্গলবার সকাল থেকেই কুলিনকুন্ডা উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বসে সারি সারি শুঁটকির দোকান। শোল, বোয়াল, গজার, টেংরা, পুঁটি—বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি সাজিয়ে বসেছেন কয়েকশত দোকানি, যারা এসেছেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে।
শুঁটকি ব্যবসায়ী নারায়ণ দাস জানালেন, “যে কোনো বছরের তুলনায় এবার ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি। যদিও এখন আর আগের মতো করে পণ্য বিনিময় হয় না, তবুও ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা তো করছি।”
লোকজ সংস্কৃতির এক প্রাণবন্ত মঞ্চ হয়ে উঠেছে পুরো কুলিনকুন্ডা। শুধু শুঁটকির নয়, আশপাশের জমিতে বসেছে লোকজ মেলা, যেখানে আছে কাঠের খেলনা, হস্তশিল্প, গ্রামীণ খাবার আর নানা বিনোদনের আয়োজন।
ক্রেতা মো. লোকমান মিয়া বলেন, “একসময় টাকা ছিল না, ছিল শস্যের বিনিময়। সেই দিনগুলোর স্মৃতি নিয়ে এই মেলায় আসা, যেন নিজেকেই খুঁজে পাওয়ার মতো।”
মেলায় এবার মোট পাঁচ একর জমিতে বসেছে প্রায় ৫ শতাধিক দোকান। সংশ্লিষ্টদের আশা, দিনব্যাপী এই আয়োজনে প্রায় তিন কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা হবে। আনন্দ, স্মৃতি আর ঐতিহ্য মিলিয়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে কুলিনকুন্ডা।
সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক কিছু। তবুও কুলিনকুন্ডার শুঁটকি মেলা আমাদের মনে করিয়ে দেয়-যতই বদলাক সময়, শেকড়ের টান কখনো ফিকে হয় না।