বগুড়ায় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার এক কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী জানিয়েছে, ছাত্র শিবির ও ইনকিলাব মঞ্চের নেতা-কর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে উদীচী ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মী রয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটে বুধবার (১৪ মে) বিকেলে বগুড়া শহরের সাতমাথা মোড়ে। সেখানে উদীচীসহ কয়েকটি সংগঠন মিলিতভাবে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করছিল। উদীচীর অভিযোগ, সংগীত পরিবেশনের সময় হামলাকারীরা উপস্থিত হয়ে হামলা চালায়। এমনকি বগুড়ার উদীচীর জেলা কার্যালয়েও ভাঙচুর চালানো হয়।
এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদ। এক বিবৃতিতে উদীচী জানায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা ও জাতীয় প্রতীক নিয়ে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীগুলোর চক্রান্ত কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত কোনো সাধারণ চিহ্ন নয়—এগুলো জন্ম নিয়েছে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বুকচিরে। এসবের অবমাননা মানেই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।
এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে উদীচীর বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত কারও দানে পাওয়া না। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এগুলো অর্জন করা হয়েছে। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকেই একটি স্বার্থান্বেষী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা পরিবর্তন করা থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের মূল সুরকে নস্যাৎ করার চক্রান্তে লিপ্ত। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে কোনভাবেই নস্যাৎ হতে দেওয়া যাবে না।
এসব ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে উদীচী। সংগঠনটি অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানিয়েছে।।
উদীচীর বগুড়া জেলা সাধারণ সম্পাদক সাহেদুর রহমান বিপ্লব বলেন, “আমরা কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন করলেও হামলাকারীরা সেখানে এসে পুলিশের উপস্থিতিতেই আমাদের ওপর হামলা চালায় এবং অফিসের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে।” তিনি এ হামলার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈনুদ্দিন জানান, “সাতমাথায় একটি অনুষ্ঠানে কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়েছিল। তবে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বলে বড় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।”
এদিকে বগুড়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আতোয়ার রহমান বলেন, “উদীচীর ঢাকার অনুষ্ঠান অনুযায়ী বগুড়ার খোকন পার্কে জাতীয় সংগীত গাওয়ার আয়োজন করা হয়। একই সময় সেখানে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। পরে টেম্পল রোডের উদীচীর কার্যালয়ে ভাঙচুর করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়।”
তিনি আরও জানান, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।”
এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিবির, ইনকিলাব মঞ্চ, এনসিপি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো নেতা-কর্মীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে উদীচী এবং অংশগ্রহণকারী অন্যান্য সংগঠন জানিয়েছে, তারা দ্রুত জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়ে যাচ্ছে।