জুলাইয়ের প্রথম প্রহর। সারাদেশে যখন ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে মোমবাতি প্রজ্বলন চলছিল, তখন এক ফেসবুক পোস্টে হঠাৎ পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর শাখার আহ্বায়ক রাশেদ খান।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে নিজের একাউন্টে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যশোর জেলার আহ্বায়ক পদ থেকে আমি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিচ্ছি এবং একইসাথে এনসিপি ও এর ছাত্র কিংবা যুব উইং-এর সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”
তার এই ঘোষণায় হতবাক হয়েছেন সংগঠনের নেতাকর্মীসহ জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকে। রাশেদে খানের এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওই পোস্টের স্ক্রিনশট সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর রাশেদ খানকে আহ্বায়ক এবং জেসিনা মোর্শেদ প্রাপ্তিকে সদস্যসচিব করে ১০১ সদস্যের যশোর জেলা কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে কমিটি ঘোষণার পরদিনই যুগ্ম আহ্বায়ক-১ মাসুম বিল্লাহ পদত্যাগ করেন, জেলা কমিটির একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে ‘নৈতিক স্খলনের’ অভিযোগ তুলে।
এর এক সপ্তাহ পর কমিটির আরও ৭ নেতা পদত্যাগ করেন, দাবি ওঠে, ছাত্রলীগপন্থী নেতাকর্মীদের ‘পুনর্বাসন’ করা হয়েছে এ কমিটিতে। চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি নীতিভ্রষ্টতার অভিযোগ এনে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব জেসিনা মোর্শেদের পদ স্থগিত করা হয়।
পদত্যাগ আর স্থগিত আদেশের মধ্য দিয়ে সময়ের সাথে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা জমতে থাকে। অভিযোগ ওঠে, জেলার শীর্ষ নেতাদের অনেকেই সংগঠনের নীতির বাইরে কাজ করছেন। যার ফলে দলের অনেক কর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতেও দেখা যায় গুটিকয়েক মুখ।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাশেদ খান কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় থেকেই জেলা পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। বামঘরানার রাজনীতি থেকে উঠে এসে ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলন’-এ তার সক্রিয় ভূমিকাই কেন্দ্রীয় নেতাদের নজরে আনে। পরে তাকেই যশোরের নেতৃত্বে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তবে হঠাৎ তার পদত্যাগে সংগঠনের ভেতরে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, রাশেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত একাধিক নেতা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে একই পথে হাঁটতে পারেন।
দলের একজন সাবেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এটা শুধু রাশেদের পদত্যাগ নয়, পুরো কমিটির ভাঙনের আলামত। অনেকেই হতাশ, অনেকে অপেক্ষা করছেন।”