বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের কদিমুকুন্দ মৌজার বাগমারা গ্রামের হাটদীঘি পুকুরপাড়ের প্রায় ৪০টি পরিবারের জীবনে রাত এখন অভিশাপ। গত তিন মাস ধরে এই গ্রামের বাসিন্দারা গভীর রাতে অচেনা লোকজনের আনাগোনা, জানালা দিয়ে টর্চলাইটের আলো ও অশালীন গালিগালাজের শিকার হচ্ছেন। নিরাপত্তাহীনতা আর আতঙ্কের মধ্যে কাটছে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত।
প্রায় ১১ একর ১৬ শতক আয়তনের হাটদীঘি পুকুরটি নিয়ে দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে চলে আসছে মালিকানা বিরোধ। এই পুকুরের উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ে ১৯৮৮ সাল থেকে সিরাজগঞ্জ ও পাবনার নদীভাঙনে গৃহহারা ৪০টি পরিবার বসবাস করছে। পুকুরটির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় শিক্ষক সুরেন্দ্র নাথ মাহাতো ও সরকারের মধ্যে মামলা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল।
সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে সুরেন্দ্র নাথ মাহাতোর পক্ষে মালিকানা নিশ্চিত হয়। তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে সুভাষ চন্দ্র মাহাতো পুকুরে মাছ চাষ শুরু করলে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরপর থেকেই শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি হামলা ও মামলার ঘটনা।গত ৯ সেপ্টেম্বর মালিকানা ও দখল নিয়ে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১৩ জন আহত হন। এরপর ৩ অক্টোবর রাতে বসতঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় উভয় পক্ষই চারটি মামলা দায়ের করেছে।
পুকুরের মালিক দাবিদার সুভাষ চন্দ্র মাহাতো জানান, “এই পুকুর ও পাড় আমাদের পারিবারিক সম্পত্তি। আদালতের রায়েও মালিকানা আমাদের পক্ষে। তিন মাস আগে কিছু লোক পুকুরটি লিজ নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। আমি রাজি না হওয়ায় তারা জোর করে দখলের চেষ্টা করে এবং আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালায়।”
অন্যদিকে, পুকুরপাড়ের বাসিন্দাদের অভিযোগ, সুভাষের লোকজনই তাদের উচ্ছেদ করতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। উত্তর পাশে বসবাসরত মনির হোসেন (৬০) বলেন, “সুভাষ মাহাতোর লোকজন আমার বাড়িতে আগুন দিয়েছে। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় আমার স্ত্রীর প্রাণ রক্ষা পেয়েছে।”
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাত হলে অচেনা সশস্ত্র লোকজনের চলাফেরা বেড়ে যায়। ফলে নারীরা সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে আছেন। মনোয়ারা বেগম, মঞ্জিলা বেগম ও গুলবানু বেগম জানান, “গভীর রাতে কিছু লোক এসে গালিগালাজ করে, জানালায় টর্চলাইট ফেলে। আমরা সবাই ভয়ে একসাথে ঘওে জেগে থাকি।”
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল হামিদ ও আনোয়ার হোসেন বলেন, “পুকুরপাড়ে যাওয়ার রাস্তা সরু হওয়ায় পুলিশ দ্রুত পৌঁছাতে পারে না। ফলে দুষ্কৃতকারীরা সুযোগ নেয়। আমরা সবাই ভূমিহীন মানুষ, শুধু শান্তিতে ঘুমাতে পারার নিশ্চয়তা চাই।”শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দিন বলেন, “এ পর্যন্ত চারটি মামলা হয়েছে। সবগুলোই তদন্তাধীন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকা বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে।”
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক খান বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।