বগুড়ার শেরপুরে নিয়োগ কেলেঙ্কারির অভিযোগে পরিক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। শুক্রবার (২৮জুন) উপজেলার ছোনকা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪টি পদে বিকেল চারটায় নিয়োগ পরিক্ষা হওয়ার কথা ছিলো। তবে পরিক্ষার্থীদের অধিকাংশ উপস্থিত থাকলেও সন্ধা পর্যন্ত নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের দেখা মেলেনি।
অপেক্ষায় থেকে পরিক্ষার্থীরা ফিরেগেলে সন্ধায় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষরিত “অনিবার্য কারণ বশতঃ নিয়োগ পরিক্ষা স্থগিতের একটি নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ ঝুলিয়ে দেন স্কুলের নিরাপত্তা কর্মী মাহবুবর রহমান। স্কুলের বাইরে অজ্ঞাত এক স্থানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খুরশিদী খুদা তাকে এই নোটিশ হস্তান্তর করেছেন বলে তিনি জানান।
এর আগে ৪টি পদে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা নিয়োগ কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে প্রতিষ্ঠানের সভাপতির বিরুদ্ধে। এই লেনদেনের তথ্য জানায় বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা।
নিয়োগ পরিক্ষার আগেই প্রার্থী চুড়ান্ত করার অভিযোগ তোলা হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক পদে ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মো: রফিকুল ইসলাম, সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে ১৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মো: দিলফুজার রহমান, পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ১৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে শফিনুর রহমান ও কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে ১৮ লক্ষ টাকার বিনিময়ে জাফর ইকবাল নিশাতকে নিয়োগ দানের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
এছাড়াও দুই বছর আগে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে নিয়োগের জন্য স্কুলের সভাপতি ফেরদৌস জামান মুকুলের কাছে ১৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ফয়সাল আবির। এ সকল বিভিন্ন কারণে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সরকারি কর্মকর্তাগণ এবং স্কুলের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সকলেই অনুপোস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন সদস্য।
জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে চারটি পদে নিয়োগের জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির সভাপতি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির ফেরদৌস জামান মুকুল। বাকি ৪ জন সদস্যরা হলেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খুরশিদী খুদা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ডিজির প্রতিনিধি বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মামুন অর রশিদ, শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও বগুড়া জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি শেরপুর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) এস এম রেজাউল করিম। কিন্তু তারা কেউই উপস্থিত হননি।
তাদের এই অনুপস্থিতির কারনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরীক্ষার্থীরা। তাদের কয়েকজন জানান, তারিখ ও সময় নির্ধারন করে নিয়োগ কমিটির অনুপস্থিতি দুঃখজনক। পরীক্ষা স্থগিত কিনা তাও তাদেরকে জানানো হয়নি।
নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের কারণ জানতে চেয়ে স্কুলের সভাপতি ফেরদৌস জামানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের মোবাইলে অনেকবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি।
বগুড়ার শেরপুরে নিয়োগ কেলেঙ্কারির বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের ২ জন অভিভাবক সদস্য বলেন, এই নিয়োগর জন্য অর্থ লেনদেনের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় কর্মকর্তারা বিব্রত হয়েছেন। তাই তারা কেউ আসেননি। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক জনরোষে পড়ার আশংকায় পালিয়েছেন।
অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন,”আমি পেটের পীড়ায় আক্রান্ত। এজন্য নিয়োগে পরীক্ষায় উপস্থিত হইনি।”
শেরপুর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) এস এম রেজাউল করিম বলন,” হঠাৎ করেই সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পরিদর্শনে যাওয়ার জন্য আমি অনুপস্থিত ছিলাম।
অনুপস্থিতির কারন হিসেবে বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মামুন অর রশিদ জানান, “যেহেতু অন্য সদস্যরা জাচ্ছেন না, আমিও যাওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না।