মাদ্রাসা সুপার ও সভাপতির বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (২৮ এপ্রিল) বগুড়ার শেরপুর উপজেলার আমিনপুর শহীদ মিজানিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ৩টি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আর্থিক লেনদেন ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। পরেরদিন সোমবার (২৯ এপ্রিল) এ ঘটনায় আরমান হোসেন নামের একজন ভুক্তভোগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে সুত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী আরমান হোসেন ওই মাদ্রাসায় ল্যাব সহকারী পদের জন্য প্রার্থী হিসেবে পরিক্ষায় অংশগ্রহন করেন। কিন্তু নিয়োগ পরিক্ষার আগে তার কাছ থেকে মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট, আবু সাইদ সরকার ও সভাপতি, মির্জা এম এ মালেক তার কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা দাবী করে। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় শাহাদৎ হোসেন নামের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কাছে উত্তর সরবরাহ করে তাকেই উত্তীর্ণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। অভিযোগে ল্যাব সহকারী পদটি পূর্বনির্ধারিত জানতে পেরে তিনি মৌখিক পরিক্ষায় অংশগ্রহন করেননি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক লেনদেনের বিষয় অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা:
এবিষয়ে অভিযুক্ত মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট আবু সাইদ সরকার বলেন, আমাদের সাথে আরমানের কোনো কথা হয়নি এবং আমরা কাকে নেব এ বিষয়েও কোনো চিন্তা চেতনাও ছিলো না। আমার জানামতে আমি কোনো অর্থনৈতিক লেনদেনের বিষয়ে কথা বলিনি।
এবিষয়ে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মির্জা এম এ মালেক বলেন, চাকরি দেওয়ার মালিক আমি না। ঢাকা থেকে ডিজি’র প্রতিনিধি প্রশ্ন নিয়ে এসে পরিক্ষা নিয়েছেন। এখানে ফেয়ার পরিক্ষা হয়েছে। আমার নামে যেসব কথা বলা হচ্ছে সেগুলো মিথ্যা বানোয়াট এবং বিভ্রান্তিকর।
মাদ্রাসা সুপার ও সভাপতির বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী বলেন, অভিযোগ এখনও হাতে পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সরেজমিনে:
জানা যায়, গত ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর ল্যাব সহকারী ও সহকারী সুপাররিনটেনডেন্ট পদে ২ জন এবং ৩ ডিসেম্বর অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপরেটর পদে ১ জন নিয়োগের জন্য জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর নির্ধারিত সময়ে ল্যাব সহকারী পদে ১২ জন, সহকারী সুপাররিনটেনডেন্ট পদে ১১ জন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপরেটর পদে ১৩ জন আবেদন করেন। তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ২৭ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ল্যাব সহকারী পদে ৬ জন, সহকারী সুপাররিনটেনডেন্ট পদে ৭ জন ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপরেটর পদে ৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের আমিনপুর শহীদ মিজানিয়া দাখিল মাদ্রাসায় গেলে এসব অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তারা জানান, পূর্ব নির্ধারিত প্রার্থীদের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ নিশ্চিত করা হচ্ছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই ল্যাব সহকারী পদে ১৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে শাহাদাৎ হোসেনকে, সহকারী সুপাররিনটেনডেন্ট পদে ১৮ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সেলিনা পারভীনকে ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপরেটর পদে ২৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে হানজালা আকন্দকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তারা। এসব প্রার্থীদের মধ্যে একজনের পিতা টাকা দেওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। এসব কারনে অধিকাংশ আবেদনকারী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেননি।
উল্লেখ্য, পরীক্ষার ফলাফলে তিনটি পদের একজনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। বাকি দুটি পদে নিয়োগ স্থগিত রাখা হয়েছে। এদিকে পূর্ব থেকেই টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রচারে থাকা শাহাদাৎ হোসেন নির্বাচিত হওয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তারা বলেন মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ভাগিনা হওয়ার কারণে তার নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে।